যেসব কারণে হেরে গেলেন মহিউদ্দিন

নগরীর পানি সংকট নিরসন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মেয়র মহিউদ্দিন। কিন্তু নগরীতে পানি সংকট প্রকট রেখেই তিনি প্রিমিয়ার ড্রিংকিং ওয়াটার নামে নিজ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এছাড়া, নগরীর নালা-নর্দমা ভরাট করে অবৈধভাবে ভূমি দখলের মাধ্যমে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছেন। এসবই তার মানবিকতাবোধ ও দায়িত্বশীলতা বিবর্জিত ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কল্পনাপ্রসূত প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বিগত ১৭ বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এক ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেননি তিনি। গৃহ কর না বাড়িয়ে বরং এক শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। চতুর্থবারের মতো মেয়রপ্রার্থী হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। অপরদিকে, কোটি টাকা খরচ করে যে ওষুধ কারখানা করা হয়েছিল তা থেকে কোনো ওষুধই তৈরি হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ফৌজদারহাট হতে ইপিজেড হয়ে সিআরবি পর্যন্ত সিটি সার্কুলার ট্রেন সার্ভিস চালু, কর্ণফুলীর তীরঘেঁষে পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত দুই স্তরের সড়ক নির্মাণ, সড়ক প্রশস্তকরণ ও বহদ্দারহাট থেকে সিইপিজেড পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ, টাইগারপাস পাহাড়ে আধুনিক ৫ তারকা হোটেল নির্মাণ, পর্যটন সুবিধা বাড়াতে পতেঙ্গায় ৫৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, চাক্তাই খালের পুরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাক্তাই খালের মুখে স্লুইস গেট স্থাপন করে মালামাল বহনের জন্য খালে সাম্পান চলাচলের ব্যবস্থা করা ছিল তার ৪০ দফার অন্যতম। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছরেও এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেননি তিনি। সিটি করপোরেশনকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে  সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে। সিটি করপোরেশনকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার অভিযোগকে আংশিক সত্য বলে স্বীকারও করেন তিনি। মহিউদ্দিনের ভরাডুবির জন্য দলীয় কোন্দলকেও উপেক্ষা করা যায় না। গত ২৭ মে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মেয়র নির্বাচনে সহযোগিতা করা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে নেতাদের গণভবনে ডাকেন। নেতাদের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সামনেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা মহিউদ্দিনের বিভিন্ন অভিযোগ এনে তাকে তুলোধুনো করেন। ওই বৈঠকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, মাহতাবউদ্দিন, আ জ ম নাসিরউদ্দিন দল পরিচালনায় মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ আনেন। এ সময় একজন নেতা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন। তাদের জেরার মুখে অসহায় হয়ে পড়েন মহিউদ্দিন। এ অসহায়ত্ব তার কৃতকর্মের চিত্রকেই দৃশ্যমান করে তুলেছিল সেদিন। এক পর্যায়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাও চান। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী অতীতের সবকিছু ভুলে গিয়ে নির্বাচনে জয়ের জন্য সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি অন্যদের ছোট করার মানসিকতা পরিহার করে সবাইকে সম্মান দিয়ে সকলের সাথে কাজ করার জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশ সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাদের ক্ষত সারাতে পারেনি।