১৫ বছর পর ক্ষার পঙ্গুত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি – চিকিৎসকের সহায়তায় নতুন জীবন ফিরে পেলেন বরিশালের রেশমা

এম.মিরাজ হোসাইন, বরিশাল ॥ কুড়ি থেকে শুরু করে দেখতে দেখতে ৩৫ বছর পার করে দিয়েছে রেশমা। এর মধ্যে বাড়ীতে আসেনি কোন ঘটক। নজরে পরেনি কোন তরুনের। আর সেই ১৫ বছর পর এক চিকিৎসকের সহায়তায় যক্ষার পঙ্গুত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি নিয়ে নতুন জীবনে পদার্পন করলেন তিনি। সেই সাথে স্বরনিয় হয়ে থাকলো বরিশালের শের-ই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সফল অস্ত্র পচারের ঘটনাটি।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুটিয়া গ্রামের মধ্যবিত্ব পরিবারের কন্যা রেশমা। মা-বাবা আর তিন বোনের পরিবার তাদের। রেশমা মাত্র ১৫ বছর বয়সে আক্রান্ত হয় যক্ষা রোগে। ধিরে ধিরে যক্ষা তার শরীরের মেরুডন্ডের মধ্যে অবস্থিত মেরু রজ্জুতে প্রবেশ করে ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলে। এতে করে ২০ বছর পেড়িয়ে উঠার আগেই দুই পা দিয়ে হাটাচলাতো দুরে থাক সামান্যতম নাড়াতে পারেনি সে। সেই থেকে দেখতে দেখতে তার বয়স ৩৫ বছরে ছোঁ ছোঁ। এই ১৫ বছরই তার চোখের সামনে দিয়ে ঘটে গেল কত ঘটনা। সংসারের বড় মেয়ে হলেও রোগের কারনে তার বিয়ের জন্য কোন প্রস্তাব আসেনি। তাই তার সামনেই বিয়ে দেয়া হলো মেঝ বোন আহাদীকে। আহাদীর এখন একটি সন্তানও রয়েছে। এদিকে ছোট বোন তানিয়ারও বিয়ে প্রায় ঠিক হয়ে আছে। কিন্তু রেশমার বিয়ের খবর নেই।

হঠাৎ করে রেশমার পরিবার সন্ধান  পেল বরিশালের এক নিউরো সার্জনের। সে অনুযায়ী গত ২০ নভেম্বর রেশমাকে নিয়ে আসা হলো বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনকার নিউরো সার্জারীর চিকিৎসক ডাঃ নরুজ্জামান খান সিদ্ধান্ত নেয় অপারেশনের। তাই বুধবার সকালে রেশমাকে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করানো হয়। অর্থপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মনিরুজ্জামান শাহীন, ডাঃ বাবুল কুমার সাহা ও ডাঃ আবুল হোসেন’র সহায়তা নিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টায় সফল অস্ত্রপচার করেন ডাঃ নুরুজ্জামান খান। রেশমা এখন তার দু’পা নড়াতে পরে। আগামী ২ একদিনের মধ্যেই সে হাটতে চলতে পারবে বলে জানান, সংশ্লিষ্ঠ চিকিৎসক। শুধু রেশমাই নয় তার পরিবার এখন মহা খুশি। এ অপারেশনে রেশমার পরিবারের খরচ হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আব্দুল রশীদ বলেন, এ অস্ত্র পচারের মধ্যে দিয়ে এ হাসপাতালে প্রথম বারের মতো এ রকমের মেজর অস্ত্রপচার হয়েছে।