সেবার প্রত্যয়ে ওরা একঝাঁক মেধাবী…..

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন, শাবি প্রতিনিধি ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে একাধিক সংগঠন। ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস। আর ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে তাদের পরিচিতি। এমনই একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন এ ক্যারাভান অব পিস। মনের মাঝে সেবার ব্রত নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি স্বার্থহীন ও নিরলস ভাবে মানব সেবামূলক কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ে শাবিপ্রবির একঝাঁক উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় এসিপির। এসিপি ২০১০ সালের ২৬শে আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন লাভ করে। বাংলাদেশের প্রায় ৪০ ভাগ অর্থাৎ ৬ কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান তাদের কাছে কল্পনার অতীত। আর এসব বিষয়কে সামনে রেখে ঐবষঢ়রহম ঐধহফং, ঊসঢ়ড়বিৎরহম খরাবং স্লোগান নিয়ে সম্ভবপর সকল দিক থেকে সাহায্য করা, যাতে তারা তাদের ভাগ্য বিনির্মাণ করতে পারে এবং এভাবে যেন শক্তিশালী ও আতœসম্মানবোধ নিয়ে জাতি হিসাবে মাথা তোলে দাঁড়াতে পারে। সংগঠনটি যেসব উদ্দেশ্য সামনে রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সেসবের মধ্যে অন্যতমÑসমাজ সচেতন মূলক কর্মকাণ্ড (নারী অধিকার ও শিক্ষা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, যৌতুক প্রথা উচ্ছেদ, শিশু শ্রম বন্ধ, গৃহস্থালী কর্মচারি নির্যাতন বন্ধ, ধুমপান ও মাদক সেবনের বিরুদ্ধে সচেতনতা এবং বিভিন্ন সেবা যেমন (রক্তদান, বন্যার্তদের সাহায্য, শীতার্তদের বস্ত্র দান, বৃক্ষ রোপন) প্রভৃতির মাধ্যমে সুস্থ, সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের মতো একাধিক  সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে এ সংগঠনটি। এলাকা অথবা স্কুল ভিত্তিক (ক্লাস ১-৮ বছর পর্যন্ত) ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করা, ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে ঝরে পড়ার কারণ নির্ণয় করা এবং সম্ভব পর সকল সাহায্যের মাধ্যমে তাদেকে স্কুলে ফিরিয়ে আনা, প্রয়োজনে শিক্ষা-সামগ্রী এবং (মাসিক/ত্রৈমাসিক) উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা। অর্থের অভাবে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম এ ধরনের গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের (মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক) উপবৃত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ। যে সমস্ত পথ শিশু ও ঝরে পড়া শিশুকে বাস্তবতার জন্য স্কুলে পাঠানো সম্ভব নয়, তাদের জন্য সপ্তাহে ২/৩ দিন বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউনিটের অধীনে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম (যেমন পথনাট্য, গান, কৌতুক, লেখালেখি, সেমিনার, লিফলেট) প্রভৃতির মাধ্যমে আমাদের সামাজিক ব্যাধি যেমন-যৈাতুক প্রথা, নারী নির্যাতন, মাদক, দূর্নীতি প্রভৃতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। বিনামূল্যে রক্তের গ্র“প নির্ণয় করা এবং আহত ও মুমূর্ষুদের প্রয়োজনে সেচ্ছায় রক্তদান করা।সামাজিক বনায়নের জন্য প্রত্যেক বছর বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালন করা। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা। শীতার্তদের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ করা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবনতা রোধ করার লক্ষে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটোরিয়ামে ‘আত্মহত্যাকে না: মৃত্যুর সাথে আপোষ নয়, জীবনের সাথে সংগ্রাম’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় ১০০ ব্যাগ রক্ত মুমূর্ষ রোগীদের দান করেছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা সামাজিক কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য এ সংগঠনটি। সংগঠনটির সভাপতি পলাশ চন্দ্র দাস বলেন,  ‘একটি সুন্দর পৃথিবী গড়াই আমাদের অঙ্গীকার; এ আমাদের সুদৃঢ় প্রতিশ্র“তি’ স্লোগান আমাদের সব সদস্যদের মাঝে সমানভাবে উৎসাহ যোগায়। আমরা ক্যাম্পাসের ভেতর ও বাহিরে নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সেবামূলক কার্যক্রম ইতিমধ্যেই ক্যাম্পাসে সবার নজর কেড়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, এসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক নতুন সংগঠন। কিন্তু আমাদের কার্যক্রমে তেমনটি মনে হয়নি। আমরা নানাভাবেই শিক্ষার্থীদের জন্য তথা সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শিক্ষকরা সব সময়ই আমাদের উৎসাহ দিচ্ছেন। ফলে আমরা আরো কাজে আনন্দ পাচ্ছি। সেবার মাধ্যমে সংগঠনটির আগামী পথ চলা আরো মসৃণ হোক। মানবতার পাশে দাঁড়াবে সবাই এমন মন্ত্রে উদ্বদ্ধ হোক প্রতিটি শিক্ষার্থীÑএরকম প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্র্থীদের।