অভাবের তাড়নায় গৌরনদীতে আট দিনের নবজাতক সন্তান বিক্রি

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আটদিন বয়সের এক নবজাতক সন্তানকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তার গর্ভধারীনি মা। সন্তানকে লালন পালন করার মতো অর্থ না থাকা ও নিজের চিকিৎসার ব্যয়ভার যোগার করতেই নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহবধূ কল্পনা বেগম ও তার পরিবারের লোকজন। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী পৌর সদরের দক্ষিণ পালরদী মহল্লার।

নবজাতকের মা কল্পনা বেগম ও নবজাতকে ক্রয় করা গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার দিয়াশুর গ্রামের মৃত সেকান্দার হাওলাদারের কন্যা কল্পনা বেগমের (২৫) সাথে পাশ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার জল্লা গ্রামের আকবর আলীর পুত্র ঝন্টু হাওলাদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাদের ঘরে দুটি পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিক, রাসেল হাওলাদার ও কন্যা মরিয়ম জন্মগ্রহন করে। চলতি বছরের প্রথম দিকে ঝন্টু তিন সন্তানসহ কল্পনাকে ত্যাগ করে আত্মগোপন করেন।

নবজাতকের মা কল্পনা বেগম জানান, গর্ভবতী অবস্থায় স্বামী ফেলে যাওয়ার পর তিন সন্তান নিয়ে তিনি আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। পথে পথে ঘুরে ভিক্ষা বৃত্তি করে অনাহারে অর্ধাহারে তাদের দিন কাটে। ৪র্থ সন্তান জন্ম নেয়ার প্রাক্কালে কল্পনা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে আশ্রয় দেন গৌরনদী সদরের দক্ষিন বিজয়পুর মহল্লার হতদরিদ্র গনি খানের স্ত্রী কালনী বেগম। তিনি হোটেলে পানি সরবারহ করে সংসার চালান।

কালনী বেগম বলেন, “পোলা মাইয়াসহ ওরে মুই চার মাস আগে আইন্না মোর বাড়িতে আশ্রয় দিছি। মোর বাড়িতে থাইক্কা খয়রাত কইররা কল্পনা পোলা মাইয়া লইয়া থাকতো। এক সপ্তাহ আগে (১৩ নবেম্বর) তার একটা পোলা হইছে। নাম থুইছি বেল্লাল”।

কল্পনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “মুই ভিক্ষা কইরা তিনডা পোলা মাইয়া লইয়া, খাইয়া না খাইয়া বাইচ্চা আছি। রোগে শোকে কাতর, পয়সার অভাবে ডাক্তার দেহাইতে পারি না। কি দিয়া বেল্লালরে বাচাইয়া রাখমু, অর খাবার যোগার করতে পারি না, অভাবের তাড়নায় মোর বুকের ধন মুই বিক্রি কইরা দিছি”। তিনি আরো বলেন, “ছোটকালে মোর বাপ (সেকেন্দার) মারা যাওয়ার পর মোর মায় মোরে হালাইয়া অন্নহানে বিয়া বইছে, মোর দাদি খরাত কইররা মোরে খাওয়াইয়া বড় করছে। বিয়ার পরে স্বামী হালাইয়া যায়। মোর দুঃখের পোড়া কপাল। এ্যাহন বোহের (বুকের) মানিক বেইচ্চা মোর অসুখ সারাইতে ডাক্তার দেহাই”।

সন্তান বিক্রির ষ্টাম্পের লিখিত বিবরনে জানা গেছে, একাধিক ব্যক্তির দ্বারা মূল্য যাচাই বাছাই করে গৌরনদী পৌর এলাকা দক্ষিন পালরদী মহল্লার আব্দুস সাত্তার সরদারের পুত্র ও গৌরনদী বাসষ্টান্ডের ব্যবসায়ী মোঃ নজরুল ইসলাম ৩৫ হাজার টাকায় গত ২১ নবেম্বর নবজাতক বেল্লালকে ক্রয় করেন। বিক্রির চুক্তিতে স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছে কল্পনার মামা গৌরনদী উপজেলার বিল্লগ্রাম গ্রামের ওহাব দাড়িয়ার পুত্র আইয়ুব আলী দাড়িয়া, মামি রহিমা বেগম, চাচাতো মামা সিরাজ দাড়িয়ার পুত্র আব্দুর রব ও আশ্রয়দাতা কালনী বেগম।

নবজাতকের ক্রেতা নজরুল ইসলাম সন্তান ক্রয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, বেল্লাল জন্ম নেয়ার পরে অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় তার মা কল্পনা ও সদ্য নবজাতক বেল্লাল মুত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। দুটি জীবন বাঁচাতে ও আমার কোন সন্তান না থাকার কারনেই আমি সন্তান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি সন্তানের মতো আদর দিয়ে ওকে মানুষ করবো। আমি আমার নামের সাথে মিল রেখে ওর নাম রেখেছি নাবিল ইসলাম।

 

একই সংবাদ দৈনিক প্রথম আলো-তে প্রকাশিত হয়েছে- নবজাতক বিক্রি