বরিশালের শিক্ষক হত্যাকান্ড – আলোচিত মামলাটি বিএনপি চায় আওয়ামীলীগের কাঁধে চাপাতে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশালের আলোচিত প্রাইমারি শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারের একমাত্র খুনী যুবদল ক্যাডারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতর স্বীকারোক্তি মতে হাজার-হাজার গ্রামবাসী ও খুনীর পরিবারের সদ্যসদের উপস্থিতিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো চাক্কু ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করে। গ্রেফতারের পর কয়েক দফায় মামলার বাদি, সংবাদকর্মী, শিক্ষক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে খুনী কালু সরদার একাই শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারকে ছুরিকাঘাত করেছে বলে স্বীকার করে। একইভাবে আদালতে ১৬৪ ধারায় খুনী কালু হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করে।

সূত্রমতে, আলোচিত এ মামলার বাদি নিহত শিক্ষকের বড়ভাই স্কুল শিক্ষক শাহজালাল জমাদ্দার ও তার স্ত্রী গৌরনদী থানায় বসে সংবাদকর্মী ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সম্মুখে খুনী কালুর নিজমুখের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি শুনে ক্ষোভে-কষ্টে খুনী কালুর ওপর দু’দফা হামলাও চালায়। ওইসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। বর্তমানে যুবদল ক্যাডার খুনী কালু বরিশাল জেলহাজতে রয়েছেন। মামলার মূল রহস্যের জট যখন খুলে গেছে, ঠিক তখনই নিজ দলের গ্রেফতারকৃত ক্যাডারকে মুক্ত করার জন্য আলোচিত মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি রাজনৈতিক মহল উঠেপরে লেগেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ওই রাজনৈতিক মহলটি কতিপয় সংবাদকর্মীদের কাছে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সংবাদ রটিয়ে আসছে।

গত ২২ সেপ্টেম্বর সকালে গৌরনদীর পিঙ্গলাকাঠী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দার নিহতের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা নিহতকে তাদের দলের সক্রিয় নেতা দাবি করেন। ওইসময় থেকে সংবাদ মাধ্যমে বিএনপির নেতারা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান শুরু করেন। সে সময় নিহতের বড়ভাই শাহজালাল জমাদ্দার বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন-আমার ভাইয়ের লাশ নিয়ে কেউ রাজনিতী করবেন না।

মামলার বাদি শাহ জালাল জমাদ্দার জানান, তার ভাই ফরিদ ও গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ নয়ন শরীফের সাথে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে একটি বিরোধ ছিলো। ওই বিরোধের জেরধরে ছাত্রলীগ নেতা নয়ন তার ভাই ফরিদকে হত্যা করে থাকতে পারে। এ আশংকায় ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শরীফ, কাজল হাওলাদারসহ ৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। তিনি আরো জানান, একমাত্র খুনী কালু সরদারকে গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তি মতে স্পষ্ট হয়ে যায় দায়েরকৃত মামলার কোন আসামিই হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন না। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক ফরিদ হত্যাকান্ডের সময় ছাত্রলীগ নেতা নয়ন শরীফ, কাজল হাওলাদার নিজ এলাকায় ছিলেন না। তারা ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরত্বের গৌরনদী পৌরসভার মেয়রের বাসায় একটি জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মামলার তদন্তকারী অফিসার (ওসি তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, মামলা দায়েরের পর নিহতের মোবাইল ফোনের কললিষ্টের সূত্রধরে তদন্তের কাজ শুরু করা হয়। একপর্যায়ে মামলার বাদি শাহ জালাল জমাদ্দারকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ ৩৫দিন পর (গত ২৬ অক্টোবর রাতে) প্রকৃত খুনী পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের আবুল কালাম ওরফে কালু সরদারকে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল এলাকার গোদাবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরো জানান, এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়া প্রেমের সূত্র ধরেই কালু সরদার একাই পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় ছুরিকাঘাত করে শিক্ষক ফরিদকে হত্যা করে। বর্তমানে সু-স্পষ্ট এ খুনের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি মহল উঠেপরে লেগেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিজদলের গ্রেফতারকৃত ক্যাডারকে মুক্ত করার জন্য আলোচিত শিক্ষক ফরিদ হত্যা মামলাটি আওয়ামীলীগের কাঁধে চাপাতে বিএনপির কতিপয় নেতারা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অপরদিকে গৌরনদী উপজেলা যুবদলের সভাপতি সফিকুর রহমান শরীফ স্বপন বলেন, ছাত্র জীবনে ফরিদ জমাদ্দার সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রদলের সহসভাপতি ছিলেন। চাকুরির পর সে কোন রাজনিতীর সাথে জড়িত ছিলো না। এছাড়া শিক্ষক ফরিদের আত্মস্বীকৃত একমাত্র খুনী গ্রেফতারকৃত আবুল কালাম ওরফে কালু সরদার যুবদলের কেউ নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।