গৌরনদীর ফরিদ হত্যা মামলা তথ্যে অসংগত – ফের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন

গৌরনদী অফিস ॥ গৌরনদীর শিক্ষক ফরিদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী কালু সরদার পুলিশ ও আদালতের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে অসংগতি দেখা দেওয়ায় আবারও জিজ্ঞেসা বাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। সোমবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। বিচারক মোঃ তছলিম আরিফ শুনারির জন্য আজ বুধবার দিন ধার্য করেন। আদালত সূত্রে জানগেছে, এর আগে পুলিশ আসামীর উদ্ধৃতি দিয়ে পরকীয়া প্রেমের জের ধরে এ হত্যা কান্ড ঘটেছে বললেও কালু সর্দারের আদালতে দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী পিঙ্গলকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ও স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্য কাজী ছালাম খুনের পরিকল্পনা করেছিল। অন্যদিকে বুধবার রাতে কালু সরদারকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থানার গোদা বাজার এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ তসলিম আরিফের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেন। কালু জবানবন্দিতে বলেন, খুনের দুই দিন আগে পিঙ্গলাকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সদস্য কাজী ছালাম তাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে যায়।

তারা দুজনেই বলেন, পিঙ্গলাকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদ জমাদ্দারকে মারধর করবি যেন ও (ফরিদ) স্কুলে না আসে। প্রধান শিক্ষক তাকে ৫’শ টাকা  ও একটি ছুরি দিয়ে ভয়ভীতি দেখোনোর জন্য পরামর্শ দেয়। সেই অনুযায়ী ২২ সেপ্টেম্বর সকালে স্কুলে যাবার পথে ফরিদকে স্কুলের চাকুরি না করার জন্য বলি। এক পর্যায়ে চাকুদিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়। সেই সময় ফরিদ ডাকচিৎকার করলে ধারালো ছুরি দিয়ে শিক্ষক ফরিদকে উপর্যুপরি কুপিয়ে পাশ্ববর্তী বাগানে গিয়ে আত্মগোপন করি।

মোস্তফা মৃধার বাগানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লুকিয়ে ছিলাম। পরে পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের নিজ বাড়িতে চলে আসি। হত্যাকান্ডের দুই দিন পর আমিরুলের সঙ্গে আমার দেখা হলে সে আরো ৫’শ টাকা দিয়ে বলে, আমাকে এলাকা ছাড়তে বলে। এ ঘটনার পর এলাকার মধ্যে ৫ দিন আত্মগোপনে থাকার পর এলাকা ত্যাগ করেছি। এ ঘটনার ৮ দিন পূর্বে পিঙ্গলাকাঠীর বাসিন্দা বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের গোদা বাজার এলাকায় বসবাসকারী আলম সরদারের ভাড়া বাসায় আমি আত্মগোপন করেছিলাম। বুধবার রাতে পুলিশ গিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে।

পরিচালনা পরিষদের সদস্য কাজী ছালাম বলেন, হত্যা কান্ডের দুই দিন পর প্রতিবেশি কালু সরদারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তখন প্রশ্ন করেছিলাম, তুমি ঘটনার সময় কোথায় ছিলা। সকলেই লাশ দেখতে এসেছে তুমি কেন আসনি? ছালাম বলেন, এইসব ঘটনায় কালু ধারনা করছে তার গ্রেপ্তারের পেছনে আমার হাত রয়েছে। তাই আমাকে ফাঁসাতে মিথ্যা জবাব বন্দি দিয়েছে। নিহতের ভাই শাহজালাল জমাদ্দার বলেন, ঘটনার পর পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা যে বর্ননা দিয়েছে তার সঙ্গে কালুর জবানবন্দি সাংঘর্ষিক। তার দাবী প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই কালু শেখানো জবানবন্দি দিয়েছে। এ দিকে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দক্ষিন পিঙ্গলকাঠি গ্রামে ফরিদ জমাদ্দারকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। ওই সময় তার ভাই নাঠৈ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহজালাল জমাদ্দার অভিযোগ করেছিলো পূর্ব শত্র“তার জের ধরে উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক নয়ন শরীফসহ অজ্ঞাত ৮/১০ জন এই হত্যাকান্ড ঘটনা ঘটিয়েছে।

এই ঘটনায় নয়ন ছাড়াও কাজল হাওলাদার ও সাদ্দাম হাওলাদার সহ অজ্ঞাতনামা ৪ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়। শিক্ষক শাহজালাল জমাদ্দার বাদী হয়ে এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলার এজাহারভুক্ত কোনো আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরা লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছিল।

এদিকে আসামীকে আটকের পর কালুর উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায় সৌদি প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে কালু এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।