বিভিন্ন দেশের সমরশক্তি-৫

গোয়েন্দা সূত্রটি জানিয়েছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির সব গবেষণা ২০০৩ সালের গ্রীষ্মকালেই সম্পন্ন করেছে। এখন তারা শুধু সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই তারা পরমাণু বোমা তৈরির কাজ শুরু করবেন। আর একটি বোমা তৈরিতে তাদের সময় লাগবে মাত্র এক বছর। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এস্টিমেট গত দুই বছর আগে বলেছিল, ইরান পরমাণু বোমা তৈরির সব গবেষণা ২০০৩ সালের মধ্যেই সম্পন্ন করে। কারণ ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন ইরানের প্রতিও হুমকি সৃষ্টি করেছিল। আরব বিশ্বের আলোচিত দেশ ইরান। সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর দেশটি ব্যাপক আলোচনায় আসে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সন্দেহের তীর এখন ইরানের দিকে। দেশটি নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করছে সব অস্ত্র। ইসরাইল রীতিমতো ভয় পায় ইরানকে। এ জন্য সুযোগ নিতে চেয়েছিল দেশটির নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সহিংসতা চলার সময় ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে। কুয়েতের আলজারিদ নামের একটি দৈনিকে একজন মার্কিন কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশিত হয়েছিল। হামলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠিও দিয়েছিল ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট বেনজামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু মার্কিন সরকার ওই চিঠি উপেক্ষা করে। অন্য এক দিগন্তের জানা-অজানা শিরোনামে এবারের বিষয় ইরানের সমরশক্তি। বিষয়টি নিয়ে লিখলে আর দেশটির পরমাণু কর্মসূচির তথ্য না দিলে তা একেবারে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এ জন্য প্রবরে অর্ধেকেরও বেশি স্থান দেয়া হয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে।

সশস্ত্র বাহিনীর সংগঠন
পুরো নাম আর্মড ফোর্সেস অব দ্য ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান। ইসলামিক রিপাবলিকের ফোর্স হিসেবে পুনর্গঠন করা হয় ১৯৮২ সালে। শাখা দু’টি। একটি ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান আর্মি (আইআরআইএ), অন্যটি ইসলামিক রিভ্যুলেশন গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। আর্মির শাখা চারটি। ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান গ্রাউন্ড ফোর্সেস, ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নেভি, ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান এয়ার ফোর্স, ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান এয়ার ডিফেন্সেস। গার্ড কর্পস’র শাখা পাঁচটি। গ্রাউন্ড ফোর্সেস, নেভি, এয়ার ফোর্স, কুদস ফোর্স ও বাসিজ। সংস্থাটির হেডকোয়ার্টার রাজধানী তেহরানে। সুপ্রিম কমান্ডার দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিই। আর্মি কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল আতাওল্লাহ সালেহী। গার্ড কর্পসের কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফরি। জনবল দেখভালের দায়িত্ব আর্মড ফোর্সের জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও আর্মড ফের্সেস লজিস্টিকস সংস্থাটির কৌশলগত পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করে। কিন্তু অপারেশনের কোনো নির্দেশনার সাথে যুক্ত নয়। ইরানের আধাসামরিক বাহিনীর নাম বাজিস। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীকে আরব বিশ্বের মধ্যে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী বলে ধরা হয়।

জনবল সাড়ে নয় লাখ
আর্মড ফোর্সের মোট অ্যাকটিভ পারসোনেল নয় লাখ ৪৫ হাজার। এর মধ্যে আইআরআইএ’র সৈন্য আট লাখ ২০ হাজার। যার অন্তর্ভুক্ত আর্মি ছয় লাখ ৫০ হাজার, নেভি ৭০ হাজার, এয়ার ফোর্সের এক লাখ। অন্য দিকে আইআরজিসি’র সৈন্য এক লাখ ২৫ হাজার।

সামরিক বাজেট গোপন রাখে
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশের মতো ইরানও তার সামরিক বাজেট পুরোপুরি প্রকাশ করে না। তবে লন্ডন’স ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে ইরানের সামরিক বাজেট ছিল ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা দেশটির মোট জিডিপি’র দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ। আরব বিশ্বে এই বাজেট তুলনামূলক অনেক কম। খরচের হিসাবে বিশ্বে এর অবস্থান ৬৭তম।

প্রতিরক্ষা শিল্প ছিল যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর
ইসলামি বিপ্লবের আগে ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্প ছিল যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। কিছু অস্ত্র তারা ইউরোপ থেকেও আমদানি করত। ১৯৭৩ সালে প্রথম ইরান প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দেয়। এ বছর ইরান ইলেকট্রোনিকস ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে। এর কাজ ছিল আমদানি করা অস্ত্রের যন্ত্রাংশ সংযুক্ত ও বিদেশ থেকে সরবরাহ করা অস্ত্রের মেরামত করা। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রথম বড় সাফল্য হচ্ছে সোভিয়েত ইউনিয়নের আরপিজি-৭, বিএম-২১ ও এসএএম-৭ মিসাইল পরিবর্তন করে নতুন সংস্করণ তৈরি করা। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান অনেকটা একা হয়ে পড়ে। সমর প্রযুক্তিবিদদের দেখা দেয় মারাত্মক অভাব। সমরাস্ত্রের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল থাকায় সমস্যাটি আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এর ফলে ইরান এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরো ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মিসাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপক অর্থ জোগান দিতে শুরু করে। ১৯৯২ সালের মধ্যে এটি মিসাইল তৈরি করা ছাড়াও নিজস্ব ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি ও ক্যারিয়ার, রাডার সিস্টেম, গাইডেড মিসাইল, সাবমেরিন, মিলিটারি ভ্যাসেল তৈরি করতে সক্ষম হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই ইন্ডাস্ট্রির সফলতা অনেক বেশি। ফজর-৩ (এমআইইরভি), হুট, কওসার, ফাতেহ-১১০, শাহাব-৩ মিসাইল এই ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করে।

ইরানের বড় সফলতা শাহাব-৩ মিসাইল তৈরি
ইরানের বড় সফলতা নিজস্ব প্রযুক্তির শাহাব-৩ নামের মধ্যম মানের ব্যালাস্টিক মিসাইল তৈরি। উত্তর কোরিয়ার নোডং-১ ব্যালাস্টিক মিসাইলের প্রযুক্তি দিয়ে এই মিসাইলটি তৈরি করা হয়। প্রথম দিকে মিসাইলটি ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ছিল। বর্তমানে এর অপারেশনাল রেঞ্জ ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার। ৯০০ কেজি মারণাস্ত্র নিয়ে ২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে গিয়ে আঘাত হানতে এর সময় লাগবে মাত্র ২২ মিনিট। অর্থাৎ এটি প্রতি ঘণ্টায় ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে। এর আওতার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমে ইসরাইল আর পূর্বে ভারতসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্য। এটি আরো সংস্কার করা হচ্ছে। শিগগিরই আসছে শাহাব-৪, শাহাব-৫, শাহাব-৬ নামের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যালাস্টিক মিসাইল। শাহাব-৩ এর সফল পরীক্ষার মাধ্যমে ইরান বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যতই অসহযোগিতা করা হোক না কেন ইরান নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে তার দেশকে সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম ও বদ্ধপরিকর।

আরো মিসাইল তৈরি করেছে ইরান
শাহাব-৩ এর তিনটি সংস্করণ করা হয়েছে। শাহাব-৩ বি, শাহাব-৩ সি ও শাহাব-৩ ডি। সবগুলোই মধ্যম মানের ব্যালাস্টিক মিসাইল। রেঞ্জ হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ১০০ কিলোমিটার। ঘাদর-১১০ নামের আরেকটি মধ্যমমানের মিসাইল তৈরি করেছে ইরান। এর অপারেশন রেঞ্জ ২ হাজার থেকে ৩ হাজার কিলোমিটার। ২ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যে আরো আছে আশৌরা মিসাইল। আছে ফজর-৩ নামের ওয়ারহেড।

শর্ট রেঞ্জের মিসাইলও কম নয়
ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তির শর্ট রেঞ্জের মিসাইলও কম নয়। শাহাব-১ তৈরি করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের এসএস-১সি ও স্কাড-বি থেকে। এর রেঞ্জ ৩৫০ কিলোমিটার। ৭৫০ কিলোমিটার রেঞ্জের শাহাব-২ তৈরি করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের এসএস-১ডি ও স্কাড-সি এর অনুসরণে। ২০০ কিলোমিটার রেঞ্জের ফাতেহ-১১০, ২০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার রেঞ্জের যিলযাল ১/২/৩ তৈরি করে ইরান। এ ছাড়াও শর্ট রেঞ্জের মিসাইলের মধ্যে আছে ফজর-৫ ও ফজর-৩ আর্টিলারি রকেট।

নিজস্ব তৈরি এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টারের বহর কম লম্বা নয়
১৯২৫ সাল থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত ইরান যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, ইতালি, ইসরাইল ও সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে অস্ত্র আমদানি করেছে। কিন্তু সামরিক ক্ষেত্রে নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলে ১৯৭৯ সালের পর। ইরানের তৈরি এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার হচ্ছে আজারাকশ। যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৫ ফ্রিডম ফাইটারের প্রযুক্তির অনুসরণে এক সিটের এই ফাইটার এয়ারক্রাফটি তৈরি করে ইরান। সায়েঘেহ-৮০ ফাইটার এয়ারক্রাফট। শাফাক অ্যাডভান্সড লাইট ফাইটার। প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার হয় এটি। রাশিয়ার এন্টোনভ এএন-১৪০ এর অনুসরণে আইআরএএন-১৪০। প্রশিক্ষণ এয়ারক্রাফট প্যারাসটো, ডোরনা, সিমোর্ঘ, ফজর এফ-৩। যুক্তরাষ্ট্রের এএইচ-১ কোবরা অনুসরণে পানহা ২০৯১। যুক্তরাষ্ট্রের বেল ২০৬ জেটর‌্যাঞ্জার অনুসরণে শাবাভিজ-২৭৫। নিজস্ব প্রযুক্তির বেল-২১৪। বেল-২০৬ ও পানহা শাবাভিজকে আরো উন্নত করে তৈরি করা হয়েছে হেসা শাহেদ-২৭৮। আরো তৈরি করা হয়েছে হেসা শাহেদ-২৮৫ নামের অ্যাটাক হেলিকপ্টার। এ ছাড়াও আবাবিল ও মোহাজের নামের বাহনও তৈরি করে ইরান। এখানেই শেষ নয়। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের ফাইটার জেট এফ-৪, এফ-৫ ও এফ-১৪ এরও উন্নত সংস্করণ তৈরির কাজ করছে। দেশটির এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও উন্নত। আছে কমপক্ষে ১১ ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা অস্ত্র। আছে প্রয়োজনীয় নৌ নিরাপত্তাব্যবস্থাও।

পরমাণু কর্মসূচি শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্রঃ চুল্লির কাজ শুরুর সময় কোনো ইরানিকে থাকতে দেয়নি
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব নানা প্রশ্ন তুললেও এর শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহায়তায়। ইরানের পরমাণু তৎপরতা শুরু হয়েছিল দেশটিতে ইসলামি বিপ্লবের অনেক বছর আগে। ১৯৫৬ সালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ গবেষণা কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র সে বছরই একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ১১ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ মেগাওয়াট শক্তির একটি ছোটখাটো পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ করে। যদিও শিক্ষা ও গবেষণাই ছিল এ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্দেশ্য, কিন্তু তা সত্ত্বেও এ চুল্লিটি নির্মাণের সময় ইরানের প্রকৌশলীদের উপস্থিতি বা তাদের সহযোগিতার ব্যাপারে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণে দেখা যায়, ইরানের বিজ্ঞানীরা যাতে এ প্রযুক্তির ব্যাপারে ধারণা অর্জন করতে না পারে সে জন্য তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে এই চুল্লির যন্ত্রপাতি সংযোজন ও চুল্লির কাজ শুরু করার সময় কোনো ইরানি বিজ্ঞানীকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়নি।
১৯৭১ সালে ইরানের শাহ সরকার পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশের সাথে পরমাণু বিষয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তিগুলোর মধ্যে ইরানের বুশহরে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের জন্য জার্মানির সাথে করা চুক্তিসহ দারখুইনে অন্য একটি পরমাণু চুল্লি নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের সাথে চুক্তি, পারমাণবিক চুল্লিগুলোর জন্য জ্বালানি সরবরাহ করতে আমেরিকার সাথে চুক্তি ও অর্ডিফ কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ঘটনা ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইরানে শাহ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ী হওয়ার পর পশ্চিমা সরকার ও পশ্চিমা কোম্পানিগুলো পরমাণু বিষয়ে ইরানের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে রাজি হয়নি। ফলে ইরান পরমাণু জ্বালানি চক্রের প্রযুক্তি অর্জন ও পারমাণবিক চুল্লিগুলোর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্যান্য দেশের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু পাশ্চাত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে পরমাণু ক্ষেত্রে ইরানের সাথে সহযোগিতা মাঝপথে ব করে দেয় অথবা এ সহযোগিতা খুবই সীমিত পর্যায়ে অব্যাহত রাখে।
ইরান ১৯৮১ সালের আগে পরমাণু ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে সক্ষম হয়নি। ১৯৮২ সালে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তি অর্জন ও এ সংক্রান্ত গবেষণায় স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে সারা দেশে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার কয়েকটি বিভাগ ও কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৮ সালে ইরানে গঠিত হয় উন্নত বা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসংক্রান্ত পরিষদ। এই পরিষদ বুশাহর ছাড়াও ইরানের অন্যান্য স্থানে পরমাণু চুল্লি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ইরানের ভেতরেই এসব পরমাণু চুল্লির জন্য ব্যবহৃত পরমাণু জ্বালানির অংশবিশেষ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়।
ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াজাত করার প্রাথমিক পর্যায় তথা ইউসিএফ প্রকল্প গড়ে তোলা ছাড়া ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের স্থাপনা প্রতিষ্ঠা যে অর্থহীন সেটা এ সময়ই ইরানি কতৃêপক্ষের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে ২০০০ সালে ইরানে ইউসিএফ প্রকল্প চালু করা হয়। চীনা বিশেষজ্ঞদের অসহযোগিতা সত্ত্বেও ইরানের তরুণ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা মাত্র চার বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল এই প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে সক্ষম হন। অন্য দিকে চীনা বিশেষজ্ঞদের ওপর ভরসা করে বসে থাকলে এ প্রকল্প চালু করতে ইরানকে কমপক্ষে ১১ বছর অপেক্ষা করতে হতো।

নিজেরাই ইউরেনিয়ামকে ইয়েলো কেইকে পরিণত করার প্রযুক্তি আয়ত্ত করে
পরমাণু শক্তিধর অধিকাংশ দেশ, পাশ্চাত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ইরান নিজস্ব মেধা ও সামর্থøকে কাজে লাগিয়ে তার পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে ইউরেনিয়ামের খনি আবিষ্কার ও তা উত্তোলন করে ইউরেনিয়ামকে ইয়েলো কেইকে পরিণত করার প্রযুক্তি আয়ত্ত করে ইরান। এমনকি ইরান ইস্পাহানে ইয়েলো কেইককে হেক্সাফ্লোরাইড গ্যাসে রূপান্তর করার স্থাপনা বা ইউরেনিয়াম কনভারশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে ও নাতাঞ্জ এলাকায় সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রের সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতেও সক্ষম হয়। এ ছাড়াও ইরানের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা হেভি ওয়াটার চুল্লি ও হেভি ওয়াটার সামগ্রী নির্মাণে সফল হয়েছে। এ স্থাপনার কার্যক্রমও পুরোদমে চালু হয়েছে। আরো বড় সাফল্যের ব্যাপার হলো ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সেন্ট্রিফিউজ ছাড়াই বিকল্প পদ্ধতিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার উপায় বের করার জন্য গবেষণা শুরু করা। এ ক্ষেত্রে লেজার পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষাগারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সফল হয়েছে দেশটি।

পরমাণু প্রযুক্তি ও তৎপরতা সম্পূর্ণ স্বদেশনির্ভর
ইরানে ইসলামি বিপ্লব-পূর্ব ও বিপ্লব-উত্তর যুগের পরমাণু তৎপরতার মধ্যে পার্থক্য হলো বিপ্লবের আগে দেশটির পরমাণু তৎপরতা ছিল পুরোপুরি বিদেশনির্ভর। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের পরে ইরানের পরমাণু প্রযুক্তি ও তৎপরতাগুলো সম্পূর্ণ স্বদেশনির্ভর হয়েছে। এর কারণ তৎকালীন শাহ সরকার পরমাণু ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে চায়নি। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানের ইসলামি সরকার পরমাণু জ্বালানি চক্র ও এর বিভিন্ন দিকে নিজস্ব গবেষণা ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেয় যাতে এ ক্ষেত্রে ইরান পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। ইরানের বিজ্ঞানীরা শান্তিপূর্ণ বা বেসামরিক পরমাণু প্রযুক্তির সব দিকে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০২ সালে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। এ প্রযুক্তি সম্পূর্ণরূপে ইরানের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত। এটা স্পষ্ট ইরানের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের আত্মবিশ্বাস ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই দেশটির পক্ষে পরমাণু প্রযুক্তির অধিকারী হওয়া সম্ভব হয়েছে। ইরান তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার ও এর মানোন্নয়ন করতেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ হিসেবে দেশটি মনে করে, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পরমাণু প্রযুক্তির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরমাণু প্রযুক্তি হচ্ছে এমন এক উন্নতমানের শিল্প প্রযুক্তি যা ২০০টি শিল্পের সাথে সম্পর্কিত ও বিজ্ঞানসংক্রান্ত ৫০০টি বিষয়ের সাথে যুক্ত।

এনপিটিতে স্বাক্ষর করেছে ইরান
পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তার রোধসংক্রান্ত চুক্তি বা এনপিটিতে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করেছে ইরান। দেশটির পরমাণু কর্মসূচি নিয়মিত নজরদারির সুযোগ পাচ্ছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ। অথচ ইহুদিবাদী ইসরাইল, ভারত ও পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন ও বিস্তার রোধসংক্রান্ত চুক্তি বা এনপিটিতে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি ভারত, পাকিস্তান ও ইসরাইলের পরমাণু স্থাপনাগুলোয় আইএইএ’র কোনো ধরনের নজরদারিও নেই। উপরন্তু ভারত ও ইসরাইল পাশ্চাত্যের দেশগুলোর কাছ থেকে পারমাণবিক সহযোগিতা পাচ্ছে। অন্য কথায় পাশ্চাত্য পরমাণু বোমার অধিকারী এ শক্তিগুলোর জন্য উন্নতমানের পারমাণবিক যন্ত্রপাতি অর্জনের পথ সুগম করে দিচ্ছে।
২০০৩ সালের আগে ইউরোপের সাথে ইরানের এক জটিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নয় দিন ধরে চলেছিল ওই আলোচনা। জটিল এই আলোচনায় ইরানের পরমাণু বিষয়টিও স্থান পায়। ওই আলোচনায় ইরানের পরমাণু বিষয় ও এর বিভিন্ন দিককে স্বচ্ছ করে তোলা হয়। এ ছাড়াও ইরানের সব পরমাণু স্থাপনা আইএইএ’র নজরদারি ও পর্যবেক্ষণব্যবস্থার আওতাধীন হয়। ইরান ১৯৯৬ সালে এনপিটি থেকে সরে এলেও পুনরায় তা বিবেচনা করে এবং তাতে আবার স্বাক্ষর করে। এ ছাড়াও ইরান পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করাসংক্রান্ত চুক্তি বা সিটিবিটি ও রাসায়নিক অস্ত্র বিস্তার রোধসংক্রান্ত চুক্তি সিডব্লিউওসি’র মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কনভেনশনেও স্বাক্ষর করে।

ইরান এনটিপি’র বাড়তি প্রটোকলেও স্বাক্ষর করে
যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য দেশগুলো ২০০২ সালের শেষ দিকে ও ২০০৩ সালের প্রথম দিকে বিশ্বজুড়ে হই চই শুরু করে যে, ইরান শিগগিরই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছে। আর এ অজুহাতে দেশটিকে পরমাণু প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত করার জন্য চাপ তীব্রতর করে। ইরানও তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে সম্ভাব্য ভুল ধারণা দূর করতে স্বচ্ছতা ও আস্থা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়। ইরান এটা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং তা আইএইএ’র তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। আর এ বিষয়ে আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইরান বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। ইরানের এই পদক্ষেপগুলো ছিলঃ তেহরান স্বেচ্ছায় এনপিটি’র বাড়তি প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। অথচ আইএইএ’র ৮১টি সদস্য রাষ্ট্রের বেশির ভাগই এ প্রটোকলে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও নয়। তেহরান আইএইএ’র বিধান ও নিয়মের বাইরেও এ সংস্থাকে সহযোগিতা করেছে। ২০০৮ সালের এপ্রিলের আগ পর্যন্ত আইএইএ’র পরিদর্শকরা ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শনে ১ হাজার ৬ শ’রও বেশি কর্মদিবস ব্যয় করেছে যা এ সংস্থার ইতিহাসে নজিরবিহীন। এর অর্থ হলো প্রতিদিন গড়ে আইএইএ’র তিনজন পরিদর্শক ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেছেন। তেহরান তার পরমাণু তৎপরতা সম্পর্কে ১০৩০ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট তৈরি করে এবং এতে ইরানের পরমাণু তৎপরতার সব বিবরণ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। এ ছাড়াও তেহরান নিয়মিতভাবে ও বিভিন্ন উপলক্ষে তার পরমাণু তৎপরতা সম্পর্কে লিখিত ও মৌখিক রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। ইরান তার পরমাণু বিজ্ঞানী ও পরমাণু স্থাপনার কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নিতে আইএইএকে অনুমতি দিয়েছে। ইরানের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি ও স্থাপনা পরিদর্শন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইরান এক পর্যায়ে তার সব পরমাণু তৎপরতা স্বেচ্ছায় স্থগিত রাখে। পরমাণু তৎপরতার জন্য ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি নির্মাণ, পারমাণবিক গবেষণা ও পারমাণবিক উপজাত পদার্থ তৈরির কেন্দ্র নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানের ইউসিএফ পরমাণু তৎপরতা­ এ সবই প্রায় দুই বছর স্থগিত রাখা হয়।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ
রেডিও তেহরানের গত ৮ আগস্টের একটি খবর। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে রেডিওটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইরান পরমাণু বোমা পরীক্ষা করার জন্য অত্যন্ত উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। গত ৭ আগস্ট প্রকাশিত এ রিপোর্টে বলা হয়, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজে অগ্রগতি অর্জন করা সত্ত্বেও ২০১৩ সালের আগে পরমাণু বোমা তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে না। ২০০৭ সালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬টি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নতুন প্রধান ডেনিস ব্লেয়ারও গত ফেব্রুয়ারিতে এক রিপোর্টে ১৬টি গোয়েন্দা সংস্থার ওই রিপোর্টকে সত্য বলে ঘোষণা করেন। তিনি এ-ও বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিতে কোনো বিচ্যুতি খুঁজে পায়নি।

পাশ্চাত্যের ভয় ইরান বিশ্বশক্তিতে পরিণত হবে
পাশ্চাত্য বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে ইরান যদি পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হয় তাহলে ইরানের জাতীয় শক্তি আঞ্চলিক ও বিশ্বশক্তিতে পরিণত হবে এবং তা বিস্ময়কর পরিবর্তন সৃষ্টি করবে। এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সের কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক বলেছেন, ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরোধিতা করছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা ও সামরিক অভিযানসংক্রান্ত পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান আইজেনস্টাইনসহ মার্কিন সরকারের কৌশলগত নীতিনির্ধারকদের অনেকেই ঠিক এ মতই পোষণ করেন। এ প্রসঙ্গে আইজেনস্টাইন লিখেছেন, যদি ইরান পারমাণবিক প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারে তাহলে পরমাণু শক্তিধর ইরানকে এ শক্তির কারণে রাজনৈতিক প্রভাবের অধিকারী হতে না দেয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চ্যালেঞ্জিং নীতিতে পরিণত হবে।

তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের ব্যাপারে তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্যগুলো হলোঃ প্রথমত, ইরানের পারমাণবিক সাফল্যগুলো ধরে রাখার লক্ষ্যে প্রতিরোধের পরিণাম সম্পর্কে ইরানিদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া ও পরমাণু প্রযুক্তি অর্জনের চেষ্টা কোনো লাভজনক বিষয় নয় বলে বোঝানোর চেষ্টা করা। দ্বিতীয়ত, ইরানের জনগণ ও সরকারের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করা এবং তৃতীয়ত, সরকারকে দুর্বল করা। এ জন্য বর্তমান সরকারকে ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শেষ সরকার হিসেবে দেখতে চায় পশ্চিমা বিশ্ব।

শেষ কথা
১৯৫০-এর দশকে পশ্চিমা শক্তিগুলো ইরানের তেল জাতীয়করণকে বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। কিন্তু ইরানের তৎকালীন সরকার ও ইরানি জাতির প্রতিরোধের কারণে ওই অন্যায় প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। ইরানি জাতি এটা ভালো করেই জানে যে, অধিকার সহজেই আদায় করা যায় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। ইরানি জাতি অতীতে যেমনটি তেল জাতীয়করণ আন্দোলনের সময় পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় সফল হয়েছিল, পরমাণু শক্তির অধিকার আদায়ের সংগ্রামেও তারা তেমনি সফল হবে। কারণ ইসলামের শিক্ষায় গভীরভাবে বিশ্বাসী ইরানি জাতি এটা জানে যে, ন্যায় বা সৎ উদ্দেশ্যের ওপর যদি তারা অবিচল থাকতে পারে তাহলে তাদের সংখ্যা বা বাহ্যিক শক্তি সীমিত হলেও তারা শেষ পর্যন্ত এ সংগ্রামে বিজয়ী হবে।

একনজরে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীপ্রতিষ্ঠাঃ ১৯৮২ (ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অধীন)।
শাখাঃ দু’টি। ইরান আর্মি ও গার্ডস কর্পস।
আর্মির শাখাঃ চারটি। গ্রাউন্ড ফোর্সেস, নেভি, এয়ার ফোর্স, এয়ার ডিফেন্স।
গার্ডস কর্পসের শাখাঃ পাঁচটি। গ্রাউন্ড ফোর্সেস, নেভি, এয়ার ফোর্স, কুদস ফোর্স, বাসিজ।
হেডকোয়ার্টার্সঃ তেহরান।
সুপ্রিম কমান্ডারঃ সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।
বাজেটঃ ৬.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০০৫)
অ্যাকটিভ পার্সোনেলঃ ৯,৪৫,০০০ জন।

Source : www.pavelmostafiz.blogspot.com