সহিংস ঘটনায় আহতদের উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারন রোগীরা ॥ মুখ খুলছেনা কর্মকর্তারা

 

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সহিংস ঘটনায় আহতদের উৎপাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের সাধারন রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। মানসম্মানের ভয়ে এদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না হাসপাতালের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখানে জোড় যার মুল্লুক তার অবস্থা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন থেকে। 
 
ভুক্তভোগী ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারীরা জানান, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গৌরনদী হাসপাতালে সর্বদা সহিংস ঘটনায় আহত রোগীরা রাজনৈতিক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। ভর্তির সাথে সাথে তাদের জন্য বেড (সিট) বরাদ্দ দেয়া হলেও সাধারন রোগীরা এ সুযোগ থেকে বরাবরই রয়েছেন বঞ্চিত। ফলে সিট না পেয়ে দিনের পর দিন জটিল রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। অথম সামান্য মারামারির রোগীরা সুস্থ্য হয়েও খাতায় নাম রাখার জন্য হাসপাতাল ছাড়ছেন না। তারা বেড ছেড়ে অন্যত্র ঘোরাফেরা করছেন। ওইসব রোগীদের নাম কর্তন করাতো দুরের কথা তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তারাও কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না। ওইসব রোগীরা নিজেদের ইচ্ছায় মতো হাসপাতাল ত্যাগ করে থাকেন। 
 
রবিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, উত্তর পালরদী গ্রামের রাহেলা বেগম (৩৫) নামের এক মহিলা রোগী হাসপাতালের মেঝেতে কাতরাচ্ছেন। তিনি শ্বাসকষ্টে ভূগছেন। গত শুক্রবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সত্বেও এখনো তিনি সিট পাননি। 
 
সূত্রে আরো জানা গেছে, হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের ১৬ টি সিটের মধ্যে ৮টিতে ভর্তি রয়েছেন মারামারির রোগী। বাকি ৮টিতে অন্যান্য রোগীরা ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে ২টি বেড মারামারির রোগীদের নামে বরাদ্দ দেয়া হলেও বেড দুটিতে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। খালি অবস্থায়ই বেড দুটি পরে রয়েছে। পুরুষ ওয়ার্ডের ১৬টি বেডের মধ্যে ১০টিতেই মারামারির রোগী। নামপ্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক সেবিকারা (নার্স) জানান, মারামারির রোগীদের মধ্যে অনেকেই এখন সুস্থ্য। তারা বেড ছেড়ে সারাদিন অন্যত্র ঘোরাফেরা করছেন। সাধারন রোগীরা জানান, মারামারির সুস্থ্য রোগীরা রাত জেগে লাইট জ্বালিয়ে স্ব-জোরে মোবাইল ফোনে কথাবলা ও বিড়ি, সিগারেট পান করে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্টসহ অন্যান্য রোগীদের ভীষন উৎপাত করে আসছে। রাজনৈতিক দলের পরিচয় থাকার সুবাধে তাদের বিরুদ্ধে কেহ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
 
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মারামারির রোগীদের দীর্ঘদিন হাসপাতালে রাখার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের টাকা দিতে হয়। টাকার বিনিময়ে মারামারির সুস্থ্য রোগীরা দীর্ঘদিন হাসপাতলের বেড দখল করে রাখায় নানান জটিল রোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ জয়নাল আবেদীন খান বলেন, মারামারির রোগীদের নিয়ে আমরা মহাবিপদে আছি। তারা ভর্তি হওয়ার পর কমপক্ষে ২১ দিন থাকতে চায়। তাদের ধারনা ২১ দিন না থাকলে সার্টিফিকেট ভারি হয়না। তিনি নিজেদের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে বলেন, ওইসব রোগীদের নাম কর্তন করতে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক চাপ আসে। এদের জন্য থানার পার্শ্বে হাসপাতাল করা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম বলেন, হাসপাতালে মারামারির রোগী ভর্তি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই নানান অভিযোগ শুনি। তবে এ ব্যাপারে হাসপাতালের কর্মকর্তারা আমাদের সহযোগীতা চাননা।