বরিশালে সালিশীতে গৃহবধূর নির্যাতনকারী ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

চেয়ারম্যান কাজী আবদুর রশিদকে সালিশ বিচারের নামে তিন সন্তানের জননীকে নির্যাতন করায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।

জেলা পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, মঙ্গলবার সকালে লঞ্চঘাট থেকে আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে ৫৪ ধারায় আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতিত গৃহবধূ রিপা বেগম বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ওসিসি) মাধ্যমে মামলা করবে। সেই মামলায় চেয়ারম্যান কাজী আবদুর রশিদকে শোন এ্যারেষ্ট দেখানো হবে।

ওসিসির পুলিশ ডেক্স ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মোঃ মাসুম বলেন, রিপা সকালে তাদের কাছে আসেন। সে বাদী হয়ে মামলা করবে। মামলায় চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনকে আসামী করার কথা জানিয়েছেন। এসআই মাসুম আরো জানান, অভিযোগ লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কতজনকে আসামি ও কোন ধারায় মামলা হবে তা বলা যাচ্ছে না।

চেয়ারম্যানের নির্যাতনে আহত রিপা বেগম (২৪) জানান, তার মেয়ে তারমিনকে (৭) প্রতিবেশী শাহাবুদ্দিন মোল্লার ভাগ্নে বাবু প্রায় একমাস পূর্বে মারধর করে। এ ঘটনায় থানা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অভিযোগ নেয়নি। পরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় শাবুদ্দিন মোল্লাসহ কয়েকজনকে আসামী করা হয়। আদালতের বিচারক মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাশার মিয়া মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে স্বাক্ষ্য দেয়ার জন্য নোটিশ পাঠান। ২৪ জুলাই বিচারকের স্বাক্ষরিত সেই নোটিশ ৩০ জুলাই তার গ্রামের বাড়ি শ্রীপুরে পৌঁছে দেয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হবার পর ওইদিন সকালে শাবুদ্দিন মোল্লার নেতৃত্বে প্রতিবেশী হারুন ঘরামী, মান্নান শেখসহ ৮-১০জন তার ঘরে হামলা ভাংচুর চালায়। এসময় হামলাকারীরা তার শাশুড়ি শাহানুর বেগমের হাত ভেঙে ফেলে।

এ ঘটনার পর ওই দিন সন্ধ্যার দিকে গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) মাহেব হোসেন, ফখরুল ইসলাম এবং এমদাদুল হক সালিসের কথা বলে তাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। রাতে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তার কাচারী ঘরে (বৈঠক খানা) শালিশ শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই মামলায় স্বাক্ষী না দেয়ার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করে। সাদা কাগজে স্বাক্ষ্য নেয়ার চেষ্ঠা করে। তখন গৃহবধু অপরাগতা প্রকাশ করেন। তখন চেয়ারম্যান বৈদ্যুতিক তার পেচানো লাঠি দিয়ে শরীরে আঘাত করে। তখন সালিস বৈঠকে শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাদের সামনে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও প্রকাশ্যে কেউ বাঁধা দেননি। একপর্যায়ে লাঠির আঘাতে গৃহবধু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে সে নিজেকে কাচারী ঘরের মাটিতে আবিস্কার করে। রাতেই তাকে মামলায় স্বাক্ষীর না দেয়ার মুচলেকায় চাচাতো শ্বশুড় মান্নান চৌকিদারের জিন্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।

শনিবার শ্রীপুরের বাহেরচরে রাত যাপনের পর রোববার সকালে চিকিৎসার জন্য বরিশালে আসতে চাইলে চেয়ারম্যানের লোকজন বাঁধাদেয়। একপর্যায়ে ছোট ভাই আল আমিনের সহযোগিতায় নৌকায় করে সেখান থেকে পালিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি হই।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী মেহেন্দীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আনছারুজ্জামান সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত শনিবার তুচ্ছ ঘটনায় রিপা বেগমের সাথে প্রতিবেশি হারুন ঘরামীর স্ত্রী কুলসুমের বিবাদ হয়। এই ঘটনার জেরে রিপা প্রতিপক্ষ হারুন ঘরামিকে লক্ষ্য করে টেটা নিক্ষেপ করে। এই ঘটনায় হারুন ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দেয়।

চেয়ারম্যান কাজী আবদুর রশিদ সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় নিজ বাড়ীর কাচারী ঘরে শালিশ বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে মহিলা উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় কথা বলতে শুরু করে।

এই সময় চেয়ারম্যান কাজী আবদুর রশিদ তার হাতে থাকা ছড়ি (বেতের লাঠি) রিপাকে আঘাত করার কথা চেয়ারম্যান তার কাছে স্বীকার করেছে বলে এসআই আনছারুজ্জামান জানিয়েছেন। এই ঘটনায় অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন আনছারুজ্জামান।

ঘটনার সময় উপস্থিত ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবুল হোসেন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রিপা বেগমেরও এলাকায় অনেক দুর্নাম রয়েছে। সে সমাজ ও দেশের কোন নিয়ম কানুন মানেন না। তাই শালিশ বৈঠকের জন্য চেয়ারম্যান শনিবার ডেকে পাঠান। শালিশ বৈঠকে সে সকলের সাথে খারাপ ও উশৃংখল আচরন করে। এই সময় লাঠি দিয়ে পিঠানো হয়েছে।