তদন্ত কমিটির তদন্তের নমুনা !

মোঃ নাসির উদ্দিন আকন পাঁচজন দিনমজুর ও কৃষকের নামে তাদের অজান্তে ঋণ তুলে নিজেই তা আত্মসাত করেছে। ঋণ পরিশোধ না করায় ঋণ খেলাপী হিসেবে ওই সব কৃষকদের নামে সার্টিফিকেট মামলা রুজু হলে তারা তাদের নামে ঋণ বরাদ্দের বিষয়টি জানতে পারেন। পরবর্তিতে গৌরনদী ও ব্যাংক পাড়ায় আলোচনার ঝড় উঠে। সোমবার ব্যাংকের তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেলেও তারা অভিযুক্ত নাসিরের পক্ষাবলম্বন করেন বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। তদন্ত কমিটি ও স্থানীয় শাখার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে  ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে জোর পূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে বলে দিনমজুর কৃষকরা অভিযোগ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে অগ্রনী ব্যাংক গৌরনদী শাখার ঋণ অফিসার নাসির উদ্দিন আকন গৌরনদী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামের মৃত আছির উদ্দিন হাওলাদারের পুত্র হোসেন আলী (৫৪), দক্ষিন গোবর্দ্ধন গ্রামের আবুল মোল্লার পুত্র নুর মহাম্মদ (৪৫), মৃত কদম আলী খানের পুত্র আকবর আলী, কালকিনি উপজেলার রমজানপুর গ্রামের সেলিম ও শাওড়া গ্রামের ইব্রাহিম সিকদারের নাম ও ছবি ব্যবহার করে ৯৬ হাজার টাকা কৃষি ঋণ উত্তোলন করে নিজেই তা আত্মসাত করেন।

হোসেন আলী, আকবর আলী, ইব্রাহিম, নুর মহাম্মদ, সেলিম  জানান, বর্তমানে তাদের নামে সুদ আসলে দ্বিগুন হয়েছে। ঋণ পরিশোধ না করায় তাদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের হলে তারা  বিষয়টি জানেন। পরবর্তিতে  নাসির উদ্দিনকে টাকা পরিশোধ করতে বললে নাসির টাকা পরিশোধ না করে তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেয়। এ নিয়ে গৌরনদী ও ব্যাংক পাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়। তোলপাল শুরু হলে গত ২৩ জুলাই নাসির উদ্দিন অভিযোগকারীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। দক্ষিন নাঠে রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত হোসেন জানান, স্বাক্ষর নিতে এসে নাসির কৃষকদের দ্বারা লাঞ্চিত হন। ২৪ জুলাই অগ্রনী ব্যাংক গৌরনদী শাখার ব্যাবস্থাপক মোঃ মাহাবুব আলম তাদেরকে (দিনমজুর ও কৃষক) ১ আগস্ট তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ সম্বলিত চিঠি দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তা জানান, ঋণ অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন আকন গত ২৬ জুলাই ঋণের আসল পরিশোধ করে দেন। এবং তদন্ত কমিটির পরামর্শে ৩১ জুলাই ঋণের বিপরীতে সুদের সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দেন নাসির উদ্দিন আকন। কৃষক হোসেন আলী, আকবর আলী অভিযোগ করেন, তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা ও স্থানীয় শাখার কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে নাসিরের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই লিখে দেয়ার জন্য বলে।  না লিখে দিলে তাদের অনেক ক্ষতি হবে বলে  জানান। এক পর্যায়ে তাদের কাছ থেকে জোর পূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন বলে তারা জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তা জানান, স্বাক্ষর নেয়া ওই সাদা কাগজে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের বর্তমান ঋণ অফিসার আকবর হোসেন, নাসির উদ্দিন আকনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই এবং তারা নিজেরা ঋণ নিয়ে নিজেরাই পরিশোধ করেছেন ষ্টেডম্যান লিখে তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেন। কৃষকরা  অভিযোগ করেন, তদন্ত কমিটি নাসির উদ্দিন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করেছে। তদন্ত কমিটির সামনে অগ্রনী ব্যাংক শেখের হাট শাখায় বর্তমানে কর্মরত, তৎকালীন গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের ঋণ অফিসার নাসির উদ্দিন আকনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিন বলেন, সত্য কথা বললে মায় মার খায়, না বললে বাপে কান্দি খায়। তখন পরিস্থিতির কারনে বাধ্য হয়ে আমাকে এ কাজ করতে হয়েছিল। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের ম্যানেজার মাহাবুব আলম বলেন, এ কথা সঠিক নয়। তদন্ত টিমের সদস্য অগ্রনী ব্যাংক বরিশাল আঞ্চলিক শাখার এসপিও খান গোলাম মোহাম্মদ ও এসও হাসান ইকবালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, তদন্ত শেষে রিপোর্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠনো হবে কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।