৪ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়ে সরকারি সম্পদ নিলামে বিক্রি

হোসেন ও সরকার দলীয় সমর্থকদের কারচুপি ও অনিয়মের মাধ্যমে ৪০ লক্ষ টাকার সরকারি সম্পদ মাত্র ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৬ শত ৫০ টাকায় নিলাম বিক্রি করেছে। গত ২৬ জুলাই দৈনিক  পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি এর সত্যতা পেয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার নিলাম বিক্রির কার্যাদেশ বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা টেন্ডার কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ঠিকাদারের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়ে ৪০ লক্ষ টাকার সম্পদ ১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকায় নিলাম বিক্রি করেছে বলে সংস্লিষ্ট ঠিকাদারসহ একাধিক কর্মকর্তা জানান।   

জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর-  আগরপুর-সরিকল -হোসনাবাদ নলগোড়া সড়ক।  ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে বরিশাল এলজিইডি অধিদপ্তর স্বল্প ব্যায় প্রকল্পে এ সড়কের ১১০৬ চেইনেজে ২৩ মিটার, ১৮৪১ চেইনেচে ২৭ মিটার, ২৫৫৯ চেইনেজে ২৭ মিটার দৈর্ঘ তিনটি আয়রন ষ্ট্রাকচার আরসিসি ব্রিজ নির্মান করেন। ব্রিজ তিনটি ভেঙ্গে নতুন করে পোনে তিন কোটি ব্যায়ে তিনটি গাডার ব্রিজ নির্মান করার প্রকল্প গ্রহন করেন। নিলাম প্রাপ্ত ঠিকাদার লাভলু মিয়া জানান, ১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকায় নিলাম পাইয়ে দেয়ার জন্য গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সব ধরনের ঝামেলা মোকাবেলা করার জন্য তার কাছ থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহন করেছে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসন জানান, প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন তিনটি ব্রিজ নিলাম দেয়ার সিদ্বান্ত ও নিলাম কমিটি মে মাসের রেজুলেশনভূক্ত না করা হলে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত হবে তাকে জানিয়ে বিষয়টি রেজুলেশনবূক্ত করার অনুরোধ জানান। একই কথা বলে প্রকৌশলী  নিলাম কমিটির সদস্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে স্বাক্ষর আদায় করেন। প্রকৌশলী স্ব উদ্যেগী হয়ে কাগজপত্র তৈরী করে লাভলু মিয়াকেকে নিলাম পাইয়ে দেন। পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশের পর উর্ধতন কর্তৃপক্ষে নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন ও ঠিকাদারদের মধ্যে তোলপার শুরু হয়।

প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন টেন্ডার কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা মিলেছে। প্রকৌশলীর মোটা অংকের  উৎকোচ নেয়ার বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমান মিলেছে। গত বুধবার সকালে নিলাম কমিটির দুই সদস্য ও ঠিকাদারকে মুখোমুখি করে এক বৈঠক করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত জনৈক সদস্য জানান, উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন , মেসার্স লাভলু মিয়াকে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকায় নিলাম পাইয়ে দিতে ৪ লক্ষ টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে গ্রহন করেছেন। ঠিকাদার লাভলু মিয়া জানান, মো. আনোয়ার হোসেন এলজিইাডর বরিশাল নির্বাহী প্রকৌশলীর জন্য ৫০ হাজার , গৌরনদী ইউএনওর নামে ১ লক্ষ টাকা, নিজে ২ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকাসহ মোট  ৪ লক্ষ টাকা তার (ঠিকাদারের) কাছ থেকে গ্রহন করে একাই তা আত্মসাত করেছে। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের একজন উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, চতুর প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন এসব ব্যাক্তিদের নামে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংস্লিষ্টদেরকে জানিয়েছেন জরুরীভাবে এ কাজটি করার জন্য উপরের নির্দেশ রয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার উপজেলা টেন্ডার কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এলজিইডির উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিতসহ নিলাম বিক্রি বাতিলের জন্য গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনকে নির্দেশ দিয়েছেন। নিলাম পাওয়া ঠিকাদারের কাছে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ৪ লক্ষ টাকা গুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেন। অনুরুপভাবে গত ১৬ মে প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন ঠিকাদারের কাছ থেকে ৮৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পুরাতন আয়রন ব্রিজের প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মালামাল ১৪ হাজার ৭শত টাকায় নিলাম দেখিয়ে জনৈক ঠিকাদার লিটন বেপারীর কাছে নিলাম বিক্রি করেছে। ঠিকাদারের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগের ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার কিছু কিছ ভুল আছে, তবে পুরো অভিযোগ সঠিক নয়।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন তার বিভাগের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ও নিলাম কমিটিসহ উপজেলা টেন্ডার কমিটির নাম ভাংগিয়ে ঠিকাদের সাথে অনৈতিক লেনদের করেছে এবং সরকারী রাজস্ব বিনষ্ট করে নিজেই আত্মসাত করেছেন।