এবারও অবরুদ্ধ বিএনপি কার্যালয়

নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। বিএনপি-জামাতসহ চারদলীয় জোট আহূত টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে গতকাল বুধবার ভোর থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। দলের কোন নেতাকর্মীকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কাউকে ভেতর থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। কার্যত পুলিশের হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে বিএনপি অফিস ও দলের নেতাকর্মীরা।

কার্যালয়ের সামনে মোতায়েন রয়েছে বিপুল পুলিশ। একই সঙ্গে দুই প্লাটুন র‌্যাব ও জলকামান। পাশাপাশি র‌্যাবের টহল দল। পুলিশ অবশ্য বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ করার কথা অস্বীকার করেছে। পুলিশের এডিসি এস এম মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ করিনি। জনগণের স্বাভাবিক চলাচল যাতে বিঘ্নিত না হয় এজন্য এখানে অবস্থান নিয়েছি। 

এদিকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মহিলা দল সভানেত্রী নূরী আরা সাফাসহ অন্তত ১০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় বেলা ১২ টা পর্যন্ত কোনও নেতা-কর্মী আটক না হলেও এর কিছুপরেই ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে দুজনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন-নাসির ও হান্নান। পুলিশ এদের আটক করে পল্টন থানায় নিয়ে গেছে। এদের কেউই বিএনপির নেতা-কর্মী নন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

কিন্ত পুলিশ বলছে, এরা সবাই বিএনপি কর্মী। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অনেক পথচারীই তো আসা-যাওয়া করছে। কিন্তু আমরা তো সবাইকে গ্রেপ্তার করছি না। তবে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম ৬ ঘণ্টায় এখান থেকে কোনও নেতা-কর্মী আটক হননি।

আগের হরতালগুলোতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা অফিসে আসার চেষ্টা করতেন। এবার সে রকম চেষ্টা তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। তাছাড়া যে কজন নেতা-কর্মী মঙ্গলবার রাত থেকেই অফিসে অবস্থান করছেন তাদের আগলে রেখেছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কোনও অবস্থাতেই তাদের গেটের বাইরে যেতে দিচ্ছেন না তিনি। কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানসহ কতিপয় নেতাকর্মী উপস্থিত রয়েছেন।

সকাল ৮ টার দিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমিনকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী তাকে ছাড়িয়ে নেন। এ ব্যাপারে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, এদিকে কেউ আসতেই পারছে না। আটক করবে কাকে?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের গেটের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি কার্যালয় অবরুদ্ধ। নেতারা অবরুদ্ধ। গণতন্ত্র অবরুদ্ধ। তারপরও সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে। তিনি দাবি করেন, গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে আজ (বুধবার) বেলা ১১টা পর্যন্ত পুলিশের লাঠিপেটায় তাদের ৫০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ ৩০০ জনকে আটক করেছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কোনো ধরনের পিকেটিং ছাড়াই জনগণ হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করছে। কিন্তু সরকার আমাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।