বাড়ী ফেরা এবং অতপর…

দম বন্ধ প্রায় শিশা যুক্ত বাতাসের নগর । তবুও জীবিকার তাগিদে এই শহরই আমার কাছে বেচে থাকার সংগ্রামের নগর। প্রায়ই এ শহর থেকে পালানর ফন্দি খুজি, প্রতিবারেই ব্যার্থ হই। তবুও আবার পথ খুজি, ছুটি খুজি বাড়ি ফেরার জন্য।  এই আকুতি প্রায়ই অফিসের কর্তাব্যক্তি নাকচ করে দেন, কখন বা মিলে যায় সেই প্রত্যাশিত খন্ড সময়ের অবসর। গত ১৮ তারিখ এমই একটা কর্ম দিবস ছিল যেদিন আমার চোখে মুখে ছিল বাড়ি ফেরার তাগিদ। আগের দুদিন থেকেই পুরো ঢাকা বৃষ্টির নগরে রূপ নেই তবুও এসব আমার কাছে সামান্যতম প্রতিবন্ধকতা মনে হয়নি, বরং প্রতিনিয়তই বাড়ছিল বাড়ি ফেরার ব্যকুলতা। প্রায় সাতমাস পর বাড়ি ফিরছি, অনেক দিন পর মাকে দেখব, বড় ভাইয়ের ছোট বাবুটা মনে হয় আরো বড় হয়েছে, খালে কি পানি বাড়ছে? রাস্তা ঘাটে অনেক কাদা, একটা ছাতা, প্লাস্টিকের সেন্ডেল আর একটা রেইন কোট নিতে হবে , গ্রামেতো ফুটবল খেলা অনেক জমে উঠছে.. এমন অনেক কথাই মাথায় ঘুঢ়পাক খাচ্ছে, সারাদিনেই আমার মা আর মেঝ ভাই ফোন দিচ্ছে, কখন রওনা দিবি? বিকেল ৪.১৫মি. গাড়ি, ৩টায অফিস থেকে বের হব বাড়ির জন্য কিছু কেনা কাটা করতে হবে সিজনাল ফল, বাচ্চাতের জন্য চকলেট, বিস্কুট এইসব আরকি। এমন সময় বড় ভাই ফোন দিল গতকালকের সব গাড়িই এখন পাড় হতে পারে নাই, আর ফেড়িও ঠিক মত চলছেন। সে অবস্য সকালেই আমাকে বলছে ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা। তবুও আমি পিছুপা হলাম না। বের হবার সময় আরিফ বল্ল ও গতকাল ফেড়িঘাট থেকে ফিরে এসেছে। এমন অনেক আপত্তি বিপত্তি যাত্রা শুরু করলাম। আল্লাহ ভরসা।

মাঝে নিকটস্থ বনানি বাজার থেকে প্রজনিয় বাজার সেরে নিলাম। কাল বিলম্ব না করে সি এন জি অটোরিক্সার সন্ধান করলাম, এ ক্ষেত্রেও ব্যর্থ । তবুও অতিরিক্ত ভাড়ার দায় নিয়ে কালো ক্যাবে চড়ে বাস কাউন্টারে পৌছালাম। ভাড়া মিটিয়ে টিকিট কেটে গাড়ির অপেক্ষা, সবার মাঝে উৎকণ্ঠা গাড়ি কখন আসবে? ফেড়ি ঠিকমত চলছেতো? রাতের মধ্যে গাড়ি পৌছবে তো? এমন অনেক কথা বাতাসে উড়ছে, একজন বলে উঠল এপাড়ে তিন/ সারে তিন কিলোমিটার জ্যম ওপারেও দুই/ তিন কিলো । এমন সময়েই একজন লোক বাসের সুপারভাইজার পরিচয় দিয়ে বললেন কিছুক্ষন এর মদ্ধেই বাস এসে পৌছবে, সে আরো আস্বস্থ করে বললেন টেনশনের কোন কারন নেই , নদীর অবস্থা এখন ভালো , ফেড়িও ঠিকমতই চলছে। সুপার ভাইজারের সত্যতা প্রমানে তখনই গাড়ি আমাদের সামনে এসে থামলো অতপর গাড়িতে উঠে টিকেটে উল্লেখিত নির্ধারিত স্থানে বসলাম। আহ! শান্তি..

এবার নিশ্চিত হচ্ছি যে বাড়ি যাচ্ছি। আগেই আকাশের মেঘ কেটে গেছে। মনে হচ্ছে অবস্থা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো, আমি পাশের জানালাটা একটু খুলে দিলাম যাতে ফুরফুরে বাতাসটা গায়ে লাগে। তখন চারি দিকে বিকেলের রূপালী আলো। আমিন বাজার পেড়িয়ে নিজের অজান্তে গান গাইতে শুরু করলাম কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে মেলে দিলাম গনের সুরে এই ডানা মনে মনে…পারুল বনের চম্পারে মোর হয় জানা… । সাভার পাড় হতেই সবুজ প্রকৃতি আমাকে সম্মোধন জানালো। এভাবেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়লাম।

রাত্র সোয়া আটটায় যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখনো গাড়ি চলছে কিন্তু রাস্তার দুই ধারে অবস্থানরত সারি সারি ট্রাক চোখে পড়লো, গোনলাম প্রায় ১৩৭/৩৮ টা ট্রাক অতিক্রম করে পদ্মার ওপারে যাওয়ার বড় বাধা ফেড়ি ঘাটে পৌছালাম। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। আবার শংকা , আম্মা, ভাই , বোনেরা ২/৩ বার করে ফোন দিয়েছে রিসিভ করতে পারি নাই, শঙকার পরও তাদের নিশ্চিত করলাম, সমস্যা নেই। বাবার চির বিদায়ের পড় বাড়িতে তেমন যাওয়া হয় নাই। কিন্তু আমার মনতো গ্রামেই পড়ে থাকে সে কথা জানে কয়জনা। বাবা সরকারী কর্মকর্তা থাকাকালিন সময়ে যখন বিভিন্ন শহরে ঘুড়ে বেরিয়েছি তখনো কারনে অকারনে মাটির টানে বাড়ি ছুটে যেতাম বারবার, এমন একটা টানেই যৌক্তিক কারন ছারা ছাড়া ইন্টারমিডিয়েট পরেছি এলাকায়ই। একঘন্টা অপেক্ষা করে সোয়ানয়টায় বাস ফেরিতে উঠলো, এবং দ্রুততম সময়ের মাঝে ওপাড়ে পৌছালাম। আমাদেও বহনকারী যানটি আবার ছুটতে শুরু করলো। এবার সম্পুর্ন মেঘমুক্ত আকাশ, বাইরের অল্প আলো চোখে পড়ছে, তাতেই বাংলার গ্রামের শোভিত রূপ ফুটে উঠছে। রাত বাড়ছে, গাড়িও আরো দ্রুত চলছে। আমিও পথ গুনছি আর কতদুর; ফরিদপুর, ভাঙ্গা, টেকেরহাট, মোস্তফাপুর তার পর ভূরগাটা। কমলাপুর অতিক্রম করে বার্থী দিকে গাড়ি চলতেই আনন্দে চোখ চকচক করে উঠলো ।

অবশেষে দীর্ঘ ৮ ঘন্টা বাস ভ্রমন শেষে টরকী বাস স্টান্ড এ নামলাম। অনেক পরিচিত যায়গা এটা। সকালে, দুপরে, বিকেলে, রাতে, শেষ রাতে যখনেই এখনে এসেছি তখনই কোননা কোন ভ্যান ওয়ালা, রিকসা ওয়ালা পেয়েছি । রাতে সাধারনত ১ জন বয়স্ক লোকের রিকসায যেতাম, গাড়ি থেকে নামতেই তিনি বলতেন; দাদা কয়টার গড়িতে উঠছিলা? যেখান থেকেই আসিনা কেন উনি আমাকে বলতেন; দাদা ঢাকার সব খবর ভালোতো? কিন্তু এবার সেই মুরুব্বিকে পাচ্ছিনা, এলাকার কিছু উন্নতি হয়েছে! যেটা আগেও চোখে পড়েছে, এবং আমাকে সেই উন্নতির সুযোগও নিতে হয়েছিল নিতান্তই এলকার একটা ছেলের অনুরোধে, সেই উন্নতিটা হচ্ছে এখানে রিকসা- ভ্যান স্টান্ডেরমত এখানে মটর সাইকেল স্টান্ড এবং অটোবাইক স্টান্ড। আমার মতে জীবন যাত্রার উন্নতির সাথে সাথে এসব কিছুর উন্নয়নের দরকার আছে কিন্তুু গরীবের পেটে লাথি মেরে না। চেঙগুটিয়ার বুড়া মিয়াকে না পেয়ে লোকাল বাস স্টান্ডের কাছে  দারান এক স্থানীয় ভ্যানওয়ালার কাছে বুড়া মিয়া সম্পর্কে জানতে চইলাম, সে বললো যে বৃদ্ধর বয়স হওয়ায় নিয়মিত রিকসা চালায় না। অগত্যা আমি অন্য কোনো বাহন খুজছি মোটর বাইক ড্রাইভারদের অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে। দিনের বেলার ভ্যানের ৮-১০ টাকার পথে যেতে তাদের দাবি ৮০-১০০টাকা। ৫০-৬০ টাকায়ও যাবেনা । এখানে জমায়ীত কিছু লোকের সমাগম দেখলাম। নিজের পরিচিত এই স্থানে নিজেকে অপরিচিত মনে হতে লাগলো। এককাপ চা খাওয়ার জন্য এখানে দারালাম, জানলাম জমায়ীত অধিকাংশই রিকসাওয়ালা। তাদের ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে এসে আমার দিকে তাকাল আর বললো ভাই একটা সিগারেট দেন, লোকটার চেহারা মনে করতে পারলাম না, তবুও পাশের দোকানিকে একটা বেনসন সিগারেট দিতে বললাম। সিগারেটে ৩/৪টা টান দিয়ে বললো কি সিগরেট দিছেন কোনো কাম হয়না। সে এবার তার পরিচয় দিল, তার নামটা শুনেছি বলে মনে করতে পারলাম না তবে তার পরিচিতি নাকি কেয়ামত নামে, এবং তার বাড়ি কসবা। সে আরো কিছু আত্বিয়ের পরিচিতি তুলে ধরলো। এবার আমি খুব বিব্রতবোধ করছি। তার সাথে আরো দু একজন যোগ দিলো। কিছুটা ভয় মিশ্রিত রাগ লাগছে ।  কাছাকাছি কোথাও থেকে গাজার গন্ধ আসছে। আমি কথা না বাড়িয়ে আমার সমস্যার কথা বললাম। কারন বুঝলাম এর সাথে কথায় জড়ালে অনেক বর সমস্যা হতে পারে। সৃতি হাতরে এমন একটা ঘটনা মনে করতে পারলাম ৯৭ সালে গৌরনদী কলেজের সামনে আমার বন্ধু মুলাদীর ছেলে জাফরকে পকেটের সব টাকা দিয়ে ঝামেলা মেটাতে হয়েছিল। সেবার যিনি সালিস ছিলেন তার নামটা মনে আছে ভালোভাবেই, যিনি জাফরকে বলে ছিলেন, আমার নাম সাহাদৎ, আমাকে সবাই চিনে তুই চেনস না কেন? অবশেষে কেয়ামত সাহেব একজনকে ধমকে বললেন , যা ভাইরে  দিয়া আয়।  ভ্যানে ওঠার পর ভ্যনওয়ালা বলতে লাগলো উনি না বললে কোন গাড়ি লড়ত না। এলাকার রাস্তাঘাট ভালো না এসব ওনারাই দেখে। রাজাপুর ব্রীজ পার হওয়ার নিশ্চিন্ত হলাম সামনে আর কোনো কেয়ামত বা আজরাইল নাই যদি না আল্লাহ পাঠায়। কারন ২/৩ বছর আগেও শুনতাম এখানথেকে ছিনতাই হয়েছে অনেকের টাকা পয়সা, মূল্যবান জিনিস। অবশেষে রাত পৌনে দুইটায় বাড়িতে ফিরলাম ঝামেলা নিয়েই। ঝামেলা হচ্ছে ভ্যনওয়ালাকে ৮০ টাকাই দিতে হবে। যাই হোক রাতের মদ্ধেই বাড়ি ফেরায় সবই খুশি, তখনও সবাই যেগে আছে এমন কি বরভাইয়ের পুত্রটিও না খেয়ে আমার অপেক্ষায়। মা যেন চাঁদ পেলো আমায় পেয়ে।

আমরা যারা বাড়ি থেকে দুর-দুরান্তে থাকি তাদের বাড়ি ফেড়ার ঘটনাটা এমনই অনেক সময়ে ঝক্কি ঝামেলা যুক্ত হয়, আর সেটা যদি হয় ঈদ, রোজা, পুজা বা বড় দিনের তাহলে তো কথাই নাই। তবুও পরিশেষটা হয় আনন্দের  যদিনা শেষ পথে ছিনতাইকারি বা এমন বিব্রতকর লোকদেও সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। তবুও এরা থাকছেই ৫ বছর আগেও ছিলো, ১০ বছর আগেও ছিলো, এখনো আছে। আমি আমাদের মাননিয় সংসদ সদস্য মহোদয়কে যতদুর চিনি এবং দেখেছি, শুনেছি, তাতে বুঝি উনি অনেক যোগ্যতা সম্পন্য ভালো মানুষ। মানুষ বিভিন্ন কারনে নিজের সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রষাসনিক অবস্থা ধরে রাখতে পারেনা, যোগ্যতা থাকা সত্যেও। কিন্তু কর্ম যদি ভালো হয় মানুষের হৃদয় থেকে সে নাম মোছা যাবেনা। তাই মাননিয় সংসদ সদস্য মহোদয় কাছে অনুরোধ এদেরকে সুপথে ধাবিত করুন, জনবলকে জনসম্পদে রূপান্তর করুন। নতুবা বিপুল জনসমার্থন কিন্তু অভিসপ্ত হতে পারে যার উদাহরন জাতির কাছে আছে।