পানি বন্দি দক্ষিনের লাখ লাখ মানুষ

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার কারণে বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলে গত ৩ দিন ধরে অভ্যন্তরীণ রুটের এমএল টাইপের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। অভ্যন্তরীন অন্যান্য রুট এবং ঢাকার সাথে দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে এমভি টাইপের (মাস্টার ভেসেল) লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী ছিল স্বাভাবিক দিনের খুবই কম। যারা দ্বোতলা এই ভেসের মাস্টার জাহাজে যাত্রী হচ্ছেন তারাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা-বরিশাল যাতায়াত করছেন। গত দু’রাতে যারাই এসব লঞ্চের যাত্রী হয়ে গন্তব্যে রওয়ানা হয়েছিলেন তারা মেঘনা অতিক্রমকালে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েন। প্রত্যেক লঞ্চের যাত্রীদের মাঝে কান্নাকাটি শুরু হয়। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া গত তিন দিনে নৌপথে কেউ যাত্রা করছে না। 

নিম্নচাপের প্রভাবে এবং দু’দিনের টানা ভারী বর্ষনে বেড়ে গেছে নদ-নদীর পানি। তলিয়ে গেছে দক্ষিনের বিস্তির্ন এলাকা, ফসলের ক্ষেত। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে চরম বেকায়দায় পড়েছে দিনমজুর এবং নিম্ন আয়ের মানুষ। অফিস-আদালত, স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। ব্যবসা বানিজ্যেও মন্দাভাব। নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না।

বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র মতে, বঙ্গোপসাগরে সৃস্ট নিম্নচাপটি ভারতের কোলকাতার দিক সরে গেছে। তারপরও এর প্রভাবে বৃষ্টির হচ্ছে। ঐ অফিসের সিনিয়র অবজারভার মোফাজ্জেল হক জানান, নিম্নচাপটি কোলকাতার দিক সরে গেলেও এখনো বিপদ কাটেনি। যে কোন সময় সেটি গতি পরিবর্তিত করে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ কারণে সমূদ্র বন্দরে ৩নং এবং নদী বন্দরে ২নং সতর্ক সংকেত বলবৎ রাখা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বরিশাল আবহাওয়া অফিস প্রায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। গতকাল বিকেলে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৬ দশমিক ২ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেলে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিলো ৯৮ ভাগ। ভারী বর্ষণ ও প্রবল বাতাসের কারণে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি।

বরিশাল নদী বন্দরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর লোকমান হোসেন জানান, ২নং সতর্ক সংকেতের কারণে নদী বন্দর থেকে ৬৫ ফিটের কম দৈর্ঘ্যের (এমএল টাইপ) লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমভি টাইপের লঞ্চ চলাচল করলেও যাত্রী স্বল্পতার কারণে অনেক লঞ্চের যাত্রা বাতিল হয়েছে। এমনকি বরিশাল-ঢাকা রুটের লঞ্চেও যাত্রী তুলনামূলক অনেক কম ছিল। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মেহেন্দিগঞ্জের বামনীর চর চ্যানেলের ডুবো চরে আটকে পড়া এমভি পারাবত-১১ লঞ্চটি দীর্ঘ চেষ্টার পর শনিবার সকাল ১১টায় টাগ বোটের সাহায্যে টেনে নামানো হয়েছে।

বিআইডব্লি¬উটিএ’র হাইড্রগ্রাফী বিভাগের উর্ধ্বতন উপ-পরিচালক আশ্রাফ হোসেন জানান, পূর্নিমার জো এবং নিম্নচাপের কারণে পানি ২ ফুট বাড়লেও এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হাইড্রগ্রাফী বিভাগের গেইজ রিডার শহিদুল ইসলাম জানান, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। শুক্রবারের তুলনায় নদীর পানি গতকাল শনিবার ৩ সেন্টিমিটার কমেছে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক এসএম আরিফ-উর রহমান জানান, বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হলেও সঠিক কোন ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যায়নি। পানি কমে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের দেয়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা অনুযায়ী সম্ভব সব রকমের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে শাক-সবজি ছাড়া তেমন কোনো ফসলের ক্ষতি হয়নি।