বরিশালে ছাত্রলীগে হ-য-ব-র-ল

আগে বিলুপ্ত করা হয়েছে মহানগর কমিটি। মেয়াদোত্তীর্ন জেলার আহবায়ক কমিটির কার্যক্রম নেই। বিশৃঙ্খল ছাত্রলীগ এখন যে যার মত চলছে। দীর্ঘ সাত বছরেও নেতৃত্বের পরিবর্তন না হওয়ায় এহেন পরিস্থিতি বিরাজমান। অধিকাংশরাই সন্মেলনের দাবী তুলে আসলেও কেন্দ্র বিষয়টিতে নিশ্চুপ।

সূত্র বলছে আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসীনের পর বরিশালে ছাত্রলীগ নেতারা টেন্ডাবাজী,মাদক ব্যাবসা থেকে শুরু করে নানাবিধ অন্যায় অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীন কোন্দলে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটে। একের পর এক বিতর্কিত কমকান্ডে আ’লীগের হাইকমান্ডও নাখোশ হন।এরইধারাবাহিকতায় বরিশাল মহানগর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে। নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থবির। মহানগরের ইউনিটগুলোর মধ্যে শুধু বরিশাল বিএম কলেজে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী সকলেই উজ্জিবিত হয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করে আসছে।ছাত্রদের অধিকার আদায়েও কলেজ শাখা ছাত্রলীগ স্বোচ্ছার ভূমিকা পালন করে আসছে। এক্ষেত্রে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে যুগ্ন আহবায়ক মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাদ সক্রিয় রয়েছে। সংগঠনের কর্মসূচী কিংবা কলেজের ন্যায় সঙ্গত প্রতিটি কর্মসূচীতে এই দুই ছাত্র নেতার অংশ গ্রহন বিদ্যমান। সাধারন শিক্ষার্থীদের দাবী দাওয়া পালনের ক্ষেত্রেও মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাদ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে আসছে।এদের মধ্যে তুষার হিরন পন্থী হিসাবে পরিচিত আর নাহিদ সেরনিয়াবাদ হাসানাত পন্থী হিসাবে পরিচিত। কিন্তু বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না মহানগরের বিলুপ্ত কমিটির নেতৃবৃন্দ। কারন তারা মহানগর কমিটিতে ফের নেতৃত্বে আসতে চাচ্ছেন।এজন্য মহানগর কমিটি বিলুপ্ত থাকা অবস্থায় কোন ইউনিটে ছাত্রলীগের কর্মসূচী পালন করাটা তারা মেনে নিতে পারছে না। এর বাইরে আরেক কারন হলো বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক মঈন তুষার মহানগরের সভাপতি পদ প্রত্যাশী। এছাড়া বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি পদ প্রত্যাশী। ছাত্ররাজনীতিতে তুষারের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে যতসব গাত্রদাহ বিলুপ্ত কমিটির নেতা হাসানাত পন্থী হিসাবে বেশ পরিচিত  জিয়াউর রহমান জিয়া,তৌহিদুর রহমান ছাবিদ,সমর দাস সমর, মিজানুর রহমান মিজানের।

সূত্র জানায়,এখানকার ছাত্রলীগের আগামীর নেতৃত্বে ঠাঁই পেতে দীর্ঘ দিন ধরে বেশ কয়েক জন লক্ষণীয় দৌঁড়ঝাপ করে আসছে। ভাইটাল পদে ঠাঁই পেতে নানা পন্থায় পথ চলছে। কমিটি গঠনে বার বার দিনক্ষণ নির্ধারণও হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে নির্ধারিত দিনক্ষণ পিছিয়ে যায়। যদিও কথা চালু হয়েছে প্রভাবশালী নেতা সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র পছন্দের নেতৃত্বে বসানোর বিষয়টি পাকাপোক্ত করতেই কাউন্সিল পিছিয়ে যাচ্ছে। তিনি আবার অস্বচ্ছতার মাধ্যমেও আর্শিবাদপুষ্ঠদের বসাতে চাচ্ছেন না।তিনি চাচ্ছেন না নতুন কোন বিতর্কের জন্ম দিতে। রাজনীতির ময়দানে কথা উঠেছে দলের মধ্যে আরেক নেতা বিসিসির মেয়র শওকত হোসেন হিরন গ্র“পের আশির্বাদপুষ্টদের কপাল পুরতেই  কৌশুলী পদক্ষেপে হেঁটে চলছেন হাসানাত । দু’নেতার মধ্যকার øায়ু যুদ্ধের কারনেই এক গ্র“প আরেক গ্র“পের কোমড় ভেঙ্গে দিতেই এগুচ্ছে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। কে হারবে কে জিতবে রাজনীতির এরকম øায়ু যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নিয়ে শংকিতও উভয় শিবির। প্রকাশ্য বোঝার উপায় না গেলেও ভেতরে ভেতরে চলছে উভয় নেতা কিংবা আর্শিবাদপুষ্টদের প্রানপন ঠান্ডা লড়াই। এদিকে হাসানাত ও হিরন সমর্থিত কয়েক ছাত্র নেতা নেতৃত্ব ভাগাভাগি করে নিতে ব্যালেন্স করে চলছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। মুলত মেয়াদোর্ত্তীন বয়স্কদের মাইনাজ করতে হাসানাত-হিরন সমর্থিত ছাত্রনেতা গোপন সমাঝোতার পথে এগুচ্ছে।

জানাগেছে,২০০৩ সালে জেলা এবং ২০০৪ সালে মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্র । দল ক্ষমতায় আসার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি আর অবৈধ দখল নিয়ে শুরু হয় সন্ত্রাস। গত ৪ মে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বরিশাল পলিটেকনিকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্র । এরপরে স্থগিত হয় বরিশাল মেডিকেল কলেজ এবং পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম।

কাণ্ডারীবিহীন হয়ে পড়ে নগর ছাত্রলীগ। ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে পলাতক ছিলেন নেতারা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এরা এলাকায় ফেরেন । একই সঙ্গে শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তদবির।পদপদবি প্রত্যাশীরা নেমে পড়েন মাঠে। চলতে থাকে কাউন্সিলর এবং প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা।  জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, পরিপূর্ণরূপে গঠনতন্ত্র মেনে কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। সেক্ষেত্রে ২৯ বছরের চেয়ে বেশি বয়সের কেউ আসতে পারবে না পদে। একই সঙ্গে বাদ পড়বে অছাত্র এবং বিবাহিতরা। তাছাড়া গঠনতান্ত্রিক রীতিনুযায়ী কমিটি গঠন প্রশ্নে গোল বাঁধছে বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, পৌর এবং কলেজ কমিটি নিয়ে। নিয়মানুযায়ী বৈধ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়করা হবেন সম্মেলনের কাউন্সিলর। কিন্তু সেরকম কোন বৈধ কমিটির অস্তিত্ব নেই এখানে। মহানগরের ৩০টি ওয়ার্ডের ১৪টিতে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ৪টির দায়িত্ব পালন করছেন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। বাকি ১২টিতে নেই কমিটির কোন অস্তিত্ব। পূর্ণাঙ্গ এবং আহ্বায়ক কমিটি থাকা ১৮টির মেয়াদও শেষ হয়েছে অনেক আগে। জেলা প্রশ্নে গঠিত হয়নি মেহেন্দীগঞ্জ পৌর কমিটি। অন্য ১০ উপজেলা, ৫ পৌরসভা এবং ৩টি কলেজে কমিটি হলেও মেয়াদ নেই সেগুলোর। গঠনতান্ত্রিক বিধান মানলে সর্বাগ্রে নতুন করে করতে হবে উল্লেখিত ইউনিট কমিটি। এরপরই কেবল কাউন্সিলররা পাবে ভোট দেয়ার বৈধতা।

বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মিলন ভূইয়া বলেন কাউন্সিল কবে হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।তিনি আরো বলেন আমরা কাউন্সিলের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।এখন কেন্দ্র দিনক্ষন নির্ধারন করলেই হয়।বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক মঈন তুষার বলেন সংগঠনকে সংগঠিত বা উজ্জীবিত করতে দ্রুত কাউন্সিল করে যোগ্যদের নেতৃত্বে আসার সুযোগ দেয়া উচিৎ। বিলুপ্ত মহানগর কমিটির যুগ্ন আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান জানান বিলুপ্ত কমিটি নেতৃবৃন্দ দুর্দিনে সংগঠনকে আকড়ে ধরে রেখে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়েছিল।সংগঠনের জন্য তাদের অনেক ত্যাগ রয়েছে। ওই সব ত্যাগীদের নেতৃত্বে থাকার আরেক বার সুযোগ দেয়া উচিৎ বলে মিজান মন্তব্য করেন।