খোকা ইলিশের কোলকাতা যাত্রা এবং … – WatchDog

জুড়েই এদের রাজত্ব। পড়তে না চাইলেও চোখে পড়তে বাধ্য। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে ছাপা হচ্ছে খবরগুলো। কখনো পড়ছি, কখনো শিরোনাম দেখে এড়িয়ে যাচ্ছি। এ যেন ভাংগা রেকর্ড, প্রতিদিন বাজছে আর আমরাও পুরানো আবর্জনা ভেবে সযত্নে এড়িয়ে চলছি। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে স্বাধীনতার ৩৯ বছরে এ আবর্জনা জমে এতটা বিশাল হয়েছে যা নিবিড় কার্পেটের মত গ্রাস করে ফেলেছে গোটা দেশকে। ১৯৭১এ সংখ্যাটা ছিল সাড়ে সাত কোটি, ২০১০ এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ কোটি। আজ হতে ৫০ বছর পর এ দেশের জনসংখ্যা কত হবে অংকবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই তা বের করতে। মানুষ বাড়ছে জ্যামিতিক হারে, জায়গা কমছে আনুপাতিক হারে। খেলার জন্যে একটা মাঠ, বিশ্রামের জন্যে একটা পার্ক অথবা চাষাবাদের একখণ্ড জমি, হয়ত ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে যাচ্ছে এক সময়ের সহজলভ্য ডালভাত। একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের ফিনিশ লাইন হতে কতটা দূরে আমাদের অবস্থান?

মনে হতে পারে ঘটনাগুলো বিছিন্ন। একবার ঘটেছে তাই বলে বার বার ঘটবে মনে করার যুক্তি নেই। সিরাজগঞ্জে ট্রেন, রূপগঞ্জে সেনাক্যাম্প, পটুয়াখালীর ভাইয়া বাহিনী, মাগুরার ইভটিজিং, ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী সারিমা রহমান, আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে বিশেষ কতগুলো জায়গার নাম, বিছিন্ন কজন মানুষ্য চরিত্র। কোথাও সম্পদ পুড়ানো, কোথাও টেন্ডারবাজি, কোথাও প্রেমের বলি। অনেকে বলবেন এ এমন আর কি, অবক্ষয়ের কিছু খন্ড চিত্র মাত্র। পৃথিবীর সব সমাজেই কিছু না কিছু অবক্ষয় হচ্ছে, যার প্রভাব দেশ ও জাতিকে ভোগাচ্ছে। বাকি দুনিয়ার সাথে আমাদের পার্থক্যটা বোধহয় এখানেই, নিজেদের অস্তিত্বের জন্যে লড়ছে ওরা। আর আমরা শীতের আয়েশি সকালের মত উপভোগ করছি আমাদের অধঃপতন। পাকিস্তান ও হাইতির মত ২/১টা দেশ ছাড়া বাকি দুনিয়ার অন্য কোথাও সামাজিক অবক্ষয় জাতীয় মূল্যবোধের উপর স্থায়ী আছর করতে পারেনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয় ছায়া জগতের গল্প কাহিনী নয় আজকের দুনিয়ায়, এসব বাস্তবতা। দেশ নিয়ে রাজনীতি এবং রাজনীতির সরকার এ জন্যেই অপরিহার্য, কারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দৌড়ে আমাদের তাল মেলাতে হয়। এ দৌড় সামনে যাওয়ার দৌড়, নতুন নতুন চূড়া পদানত করার দৌড়। কোন ফিনিশ লাইনের দিকে দৌড়াচ্ছি আমরা? উপরের ছবি দুটো কি কিছুটা হলেও দিক নির্দেশনা দেয় না?

’খোকা ইলিশের’ স্বাদ নাকি অতুলনীয়। বাংলাদেশের ঝাটকা ইলিশ নিয়ে এমনটাই মন্তব্য করলেন কোলকাতার জনৈকা গৃহবধূ। খবরে প্রকাশ, সমুদ্রের ইলিশ বাচ্চা প্রসবের জন্যে বাংলাদেশেকে এখন আর উপযুক্ত মনে করছে না। ওরা চলে যাচ্ছে প্রতিবেশি দেশ ভারতে। অর্থাৎ গভীর সমুদ্রের বাসিন্দা ইলিশও বুঝে গেছে কেবল বসবাসের নয়, ডিম পারার জন্যেও উপযুক্ত নয় বাংলাদেশের নদী। ভয়ংকরভাবে নাব্যতা হারাচ্ছে এ দেশের নদ-নদী, চর জেগে উঠছে যত্র তত্র, দখল হয়ে যাচ্ছে দুই তীর। নদী ও মানুষের সহাবস্থানের ইতিহাস কোটি বছরের পুরানো ইতিহাস। সে ইতিহাসের উপর আছর করেছে বাংলাদেশি ভুত। শুধু ইলিশ কেন, যে কোন মাছই জাদুঘরে ঠাঁই নেবে কালের চক্রে। সে দিকেই এগোচ্ছি আমরা।

সৃষ্টিকর্তার দুনিয়ায় তিনিই একমাত্র মালিক যিনি বলতে পারেন কবে শেষ হচ্ছে এর অস্তিত্ব। এমন একটা দিনের কথা জানা থাকলে মেনে নেয়া যেত বাংলাদেশের সমকালীন বাস্তবতা। সম্পত্তি নিয়ে দুই পরিবারের বিবাদকে কপালের লিখন ভেবে কোন রকমে কাটিয়ে দেয়া যেত বাকি দিনগুলি। কিন্তু আখেরি দিনের হদিস আমাদের জানা নেই। দিগন্তরেখায় এর উঁকিঝুঁকিও নেই। নৈরাজ্যের লীলাভূমিতেই আমাদের বেচে থাকতে হবে। এখানেই সংসার করতে হবে, সন্তানাদি জন্ম দিতে হবে। সাড়ে সাত কোটি হতে সতের কোটি, সতের হতে পঞ্চাশ কোটি, এভাবেই পল্লবিত হবে আমাদের ইতিহাস। বেচে থাকারও বোধহয় প্রকার ভেদ আছে, কারণ পশুরাও বেচে থাকে। একজন বাংলাদেশি এবং একটা বোবা পশুর সমান্তরাল যাত্রা কোথাও না কোথাও এক হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্র। পশুর সাথে আমাদের পার্থক্যটা বোধহয় ডারউনের চশমা দিয়ে খুঁজতে হবে সে দিন।


WatchDog : AmiBangladeshi.Org