রাজনীতির নাও পাহাড় বাইয়্যা যায়!

“মালয়েশিয়াতে বিএনপির ৩২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন”।
“নিউইয়র্কে বিএনপির সমাবেশের হুমকি: যেখানে হাসিনা সেখানেই প্রতিরোধ”।
“একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ইতালী শাখার আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত”।
“বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছে, সর্ব ইউরোপীয়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি, শ্রী অনিল দাশ গুপ্ত”।
“১৫ আগষ্ট ও ২১ আগষ্ট উপলক্ষে গ্রেটার ওয়াশিংটন আওয়ামী লীগের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত”

নিউ ইয়র্ক হতে প্রকাশিত অনলাইন বাংলা পত্রিকায় উপরের খবরগুলো পড়ে লেখার লোভটা সামলাতে পারলাম না।

অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা অথবা ইউরোপের সাথে বাংলাদেশের যোজন যোজন দূরত্ব। দেশ গুলোর মাঝে মধ্যে দাড়িয়ে আছে নদী নালা, বন জংগল, পাহাড়-পর্বত, সাগর আর মহাসাগর। অষ্ট্রেলিয়া শুধু একটা দেশই নয়, বিশাল একটা মহাদেশও। যতদূর জানি দেশটার রাজনৈতিক মাঠ লিবারেল ও লেবার নামের দুটো রাজনৈতিক দলের দখলে। পওলিন হেনসনের ১-নেশন পার্টি বলেও একটা দলের অস্তিত্ব ছিল ৯০’এর দশকে। এ ধরনের রাজনৈতিক কাঠামোতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মত বাংলাদেশী রাজনৈতিক দল কোন ধরনের কার্যক্রম নিয়ে অস্ট্রেলীয় জনগনের মন কাড়তে সক্ষম হবে তার কোন ব্যাখ্যা অবশ্য কমিটির কার্যক্রমে উল্লেখ নেই। আমার মত বে-আক্কেলদের কাছে যেকোন দেশে রাজনৈতিক দল করা মানেই সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করা। সে অর্থে আমরা ধরে নিতে পারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অষ্ট্রেলিয়া শাখা অথবা যে কোন বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনৈতিক দল অষ্ট্রেলিয়া শাখার মূল উদ্দেশ্যও দেশটার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল। আসলেই কি তাই? যেহেতু বিএনপির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, স্বভাবতই ধরে নিতে পারি অস্ট্রেলিয়াতে ছাত্রলীগও আছে, সাথে আছে ছাত্রদল, আওয়ামী লীগ সহ বাংলাদেশী তাবৎ রাজনৈতিক দল, উপদল, কোন্দল, মারামারি, লাঠালাঠি, ইত্যাদি।

সিডনির মারুবরা এলাকায় এনযাক প্যারেডের উপর একটা বারে বসে ভারত-অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেট খেলা দেখছিলাম। ওখানে পরিচয় হল ট্রেনিং’এ আসা জনৈক বাংলাদেশী ডাক্তারের সাথে। পরিচয় পর্ব শেষ না হতেই অদ্ভুত এক প্রস্তাব করে বসলেন ভদ্রলোক। বাংলাদেশের তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল সাহেব নাকি সিডনিতে আছেন ব্যাক্তিগত কাজে। ডাক্তার ভাই টানাটানি শুরু করে দিলেন এখনই যেন মন্ত্রীর সাথে দেখা করতে জর্জ ষ্ট্রীটের কোন একটা হোটেলে যাই। উদ্দেশ্য? বিশেষ কিছু না, মন্ত্রীর সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হওয়া। দশটা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে উনাকে মাইনাস করতে হয়েছিল সে যাত্রায়।

শুধু সিডনি কেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরও দশ ডিগ্রী উপরে। নিউ ইয়র্কের উডসাইড এলাকায় ৬১ ষ্ট্রীটের উপর বাংলাদেশী একটা রেষ্টুরেন্ট। কাজ হতে ফেরার পথে প্রায়ই দেখতাম ছোট একটা ব্যানার টানিয়ে এর ভেতর কেউ একজন জ্বালাময়ী ভাষন দিচ্ছেঃ ভাইসব, হাইমচর এবতাদিয়া মাদ্রাসার উপর বাকশালীদের নগ্ন হামলা জাতি কোন ভাবেই বরদাশত্ করবে না, টেকনাফ হতে তেঁতুলিয়া এক হয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে জাতি এই জালিম সরকারকে গদি ছাড়া করবে ইনশ্‌আল্লাহ! বলাই বাহুল্য, হাততালির বন্যায় ভেসে যেত চারদিকের জনপদ। নেক্সট ডোর থাই রেষ্টুরেন্টের গ্রাহক ও কর্মচারীরা প্রতিদিন অবাক হয়ে শুনতো তাদের জন্যে অদ্ভূত এই কিচিরমিচির। কোথা সেই হাইমচর আর কোথায় এই উডসাইড, সমস্যা সমাধানের উপযুক্ত জায়গা বটে!

এত বছর বিদেশে থাকার পরেও কেন জানি এই জিনিসটা ধরতে পারলাম না, বিদেশে কেন বাংলাদেশী রাজনৈতিক দল! কি তাদের উদ্দেশ্য? কাদের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াই করছে এরা? বাংলাদেশীদের? প্রবাসে বাংলাদেশীদের জন্যে রয়ে গেছে স্ব স্ব দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো, সে জায়গায় বাংলাদেশী রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুধু অসারই নয়, বরং অবৈধ। অষ্ট্রেলিয়া/আমেরিকায় বংগবন্ধু অথবা শহীদ জিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের আদৌ কি কোন প্রয়োজন আছে? থাকলে এর আইনী বৈধতা কোথায়? আর যদি বিদেশে বসে এ ধরনের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে জন্মভূমির সেবা, বলতে বাধ্য হব, এ নিতান্তই বালখিল্যতা। দেশ সেবার উত্তম জায়গা দেশ, বিদেশ হতে পারে না। বিদেশে দুচার পয়সা অতিরিক্ত আয় করে দেশে পাঠানো গেলে বরং দেশ বেশী উপকৃত হতে পারে। আর এ জন্যে চাই যে দেশে আমাদের বাস সে দেশের মূলধারার রাজনীতির সাথে নিজেদের সংপৃক্ত করা। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ্‌গন আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি নিউ ইয়র্ক শাখার মত দেশীয় রাজনৈতিক দল গুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের ফাউন্ডেশন গড়ে থাকেন, এ সহজ সত্যটা বুঝতে প্রবাসীদের আর কতদিন দেরী হবে?

নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্খানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বার্তা সংস্খা এনার প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কোন রাজনৈতিক দলেরই বিদেশে শাখা গঠনের বিধান নেই। তবে যে সব রাজনৈতিক দলের প্রবাসী সংগঠন রয়েছে সেগুলো পরিচালিত হবে ঐসব দেশের বিধি অনুযায়ী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে প্রবাসী সংগঠনগুলো হচ্ছে ‘অর্গানাইজেশন অব ব্রাদার্স।’ সেগুলোর সাথে সাংগঠনিক কোন সম্পর্ক রাখার নীতিগত অধিকার না থাকলেও আমাদের আদর্শগত সম্পর্ক রয়েছে এবং এ সম্পর্ককে আমরা পারস্পরিক কল্যাণে ব্যবহার করে থাকি


watchdog লেখক – ওয়াচডগ