জীবন যুদ্ধে পরাজিত ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা এলএমজি শাহজাহান চোকদার

গৌরনদী ডটকমঃ ১৯৭১ সনে শক্ত হাতে এলএমজি শাহজাহান চোকদার রনাঙ্গন কাঁপিয়েছিলেন। নয় মাস যুদ্ধ করে তিনি ছিনিয়ে এনেছিলেন সবুজে রক্তে লাল Freedom Fighter Shahjahanবিজয় পতাকা। সেই রনাঙ্গণ কাঁপানো ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান চোকদার (৬০) এখন জীবন যুদ্ধে পরাজিত। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম বেজহার গ্রামের মৃত রাজে আলী চোকদারের পুত্র শাহজাহান চোকদার।

ভ্যান চালিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী স্ত্রী, ১ পুত্র ও ৩ কন্যাকে নিয়েই ছিলো শাহজাহান চোকদারের সংসার। উপার্জিত অর্থ ও ধারদেনা করে ৩ কন্যাকেই তিনি বিয়ে দিয়েছেন। গত ৪ বছর ধরে হৃদরোগে (ষ্টক করে) আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় শাহজাহান চোকদার প্রতিনিয়ত এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান চোকদার ভ্যান চালিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। কিন্তু তার সে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে। পিতার অসুস্থ্যতার পর একমাত্র পুত্র ভাষাই চোকদার (২০) দিনমজুরের কাজ করে সংসারের হাল ধরেন। ভাষাইর একার আয়েই কোন একমতে যেমন নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তেমনই চলছে শাহজাহান চোকদারের সংসার। বর্তমানে অর্থাভাবে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন রনাঙ্গণ কাঁপানো বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান চোকদার ও তার পরিবারের সদস্যরা।

যেখানে নিজেই নানারোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন সেখানে নিজের জীবনের কথা না ভেবে শেষপ্রান্তে এসে ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান চোকদার তার একমাত্র ছেলের ভবিষ্যতের জন্য একখন্ড জমি ও একটি কর্মস্থানের সুযোগ করে দেয়ার জন্য সমাজের মহানুভব সমাজপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান চোকদার জানান, ১৯৭১ সনে যুদ্ধ শুরুর পূর্বে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করে চট্টগ্রামে প্রশিক্ষনে যান। এর কয়েকদিন পরেই দেশে যুদ্ধ শুরু হলে তিনিসহ ৬৯জন বাংলাদেশী পালিয়ে ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে এসে গ্র“প কমান্ডার আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে তিনি পাকসেনাদের সাথে একাধিকবার সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি এলএমজি অস্ত্র ব্যবহার করতেন। তাই পরবর্তীতে তার নাম পরেছে এলএমজি শাহজাহান। মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান চোকদার বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিনেও আমাদের কোন সরকারই মূল্যায়ন করেননি। ১৯৯৬ সনে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আক্ষেপ করে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান চোকদার বলেন, মরার আগে যদি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেইখা যাইতে পারতাম, তাহলে মরেও শান্তি পাইতাম।