আগৈলঝাড়ার কেতনার বিলে আজো নির্মিত হয়নি স্মৃতি স্তম্ভ

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও বরিশালের আগৈলঝাড়ার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের কেতনার বিলের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালিন সময় সহস্রাধিক শহীদ হওয়া লোকের খোজ খবর কেউ রাখেনি। সহস্রাধিক লোক শহীদ হলেও এখনও তাদের স্মরণে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ।

সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানাগেছে, ১৯৭১ সালে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে পাক বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলা সহ পাশ্ববর্তি উপজেলার সহস্রাধিক শিশু ও নারী পুরুষ। স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদদের কোন সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে এলাকার একাধিক প্রবীন ব্যাক্তি জানান শহীদদের সংখ্যা সহস্রাধিক। রাংতা গ্রামের শহীদ হওয়া কাশীনাথ পাত্রের ছেলে জগদীশ পাত্র (৫৫)র কাছে সাংবাদিকরা ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,“কত লোক আইলো গ্যালো লেখে নিলো কিন্তু কোন কিছুই হইলোনা আবার আপনাগো লগে কতা কইয়া কি অইবে সেদিনও তো থানার বড় বাবুরা আইলো কতা কইলো লেইক্কা নিলে হ্যাতে কিছুই হইলোনা আমনেরা ল্যাহেন মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির জন্য মুই জাগা দিমু”। তিনি আরও জানান, ঘটনার দিন ১লা জৈষ্ঠ রোববার সকালে প্রান বাচাতে পালাতে গিয়ে পাক বাহিনীর গুলিতে এলাকার শত শত নারী পুরুষ কেতনার বিলে শহীদ হয়। ওই সময় তার বাবার সাথে পালাতে গিয়ে নিজে বাচলেও বাবার শরীরে ৫ টি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই বাবা শহীদ হয়। ঘটনার দিন সকালে চেঙ্গুটিয়া এলাকা দিয়ে হাজার হাজার লোক জীবন বাচাতে কেতনার বিল পাড়ি দিয়ে উপজেলার কোদালধোয়া, রামানন্দেরআক, বাকাল এলাকায় পালানোর সময় কেতনার বিলের  পাশ্ববর্তী কেষ্ট পাত্রর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। যখন পাক সেনারা পূর্ব দিক দিয়ে পশ্চিম দিকে আসতে থাকে তাদের দেখে দৌড়ে পালানোর সময় পাক সেনাদের ব্রাশ ফায়ারে কেতনার বিলে সহস্রাধিক লোক ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। এর পর পাক সেনারা পাত্র বাড়ির বসত ঘর গুলোতে অগ্নি সংযোগ করে। এর পরে এলাকার লোকজন ওই বাড়িটি পোড়া বাড়ি নামেই পরিচিতি পায়। ওই দিন পাক সেনাদের গুলিতে গাছের একটি পাতাও ছিলনা। ওই সময় সমস্ত কেতনার বিল লাশের স্তুপে পরিনত হয়। অনেক লাশ শিয়াল কুকুরে ছিড়ে খেয়েছে। পরদিন এলাকার অমূল্য পাত্র ও হরলাল পাত্রর নেতৃত্বে  পাত্র বাড়ির বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি গর্ত করে লাশগুলো চাপা মাটি দেয়া হয়। ওউ বাড়ির শিশু সহ ১৯ জন লোকও এর মধ্যে মাটি দেয়া হয়। মাটি দেয়া ছাড়া বাকি লাশগুলো কেতনার বিলেই পচে গলে নষ্ট হয়ে যায়। ওই বাড়ির বিভিন্ন গর্তে যাদের মাটি চাপা দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ক্শানাথ পাত্র, বিনোদ পাত্রর স্ত্রী সোনেকা পাত্র,গীতা পাত্র, কানন পাত্র, মঙ্গল পাত্র, হরিদাসি পাত্র, দেবু পাত্রর স্ত্রী গীতা পাত্র, মোহন পাত্র, খেনতি পাত্র, শ্যামলী পাত্র, মঞ্জু পাত্র, মতি পাত্র, সুমালা পাত্র, অমৃত পাত্র অন্যতম। সুবরণ বিশ্বাসের ছেলে প্রত্যক্ষদর্শী শ্রীধাম বিশ্বাস জানান, শহীদ হওয়াদের মধ্যে এলাকার লোকজন সহ পাশ্ববর্তি গৌরনদী উপজেলার টরকী, মেদাকুল, ঘোষেরহাট এলাকার লোকজনও ছিল।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের পুণর্বাসন সমাজ কল্যান, যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ডেপুটি কমান্ডার আ. রইচ সেরনিয়াবাত নিজেকে ওই দিনের হত্যা কান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভুমি উলখ করে বলেন, ইতোমধ্যেই বধ্য ভূমিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সংশি¬¬ষ্ঠ মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকারী বরাদ্দ অনুযায়ী ওখানে কাজ করা হবে। তবে এর আগে ওই বাড়িতে যাবার জন্য একটি রাস্তা নির্মান করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।