অমানবিক!

বরিশাল প্রতিনিধি ॥ আর কি হলে আচরণটি অমানবিক হতে পারে। লঞ্চের ভাড়া কম দেয়ায় ৭ বছরের শিশুটিকে মেঘনার এপাড় নামিয়ে দিয়ে মাকে মেঘনার ওপড় নিয়ে গেছে লঞ্চের স্টাফরা। এদিকে সম্পূর্ণ অপরিচিত জায়গায় জোর করে নামিয়ে দেয়া শিশুটির চোখের সামনে দিয়ে যখন তার মাকে লঞ্চ থেকে নামতে না দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন শিশুটির বুক ফাটা আর্তনাদ ওই পাষন্ডদের মনে কোন দাগ কাটেনি। শিশুটির একটানা “আমি ম’র কাছে যামু। আমি ম’র কাছে যামু।” এভাবে চিৎকার করছিল। এক পর্যায়ে শিশুটির মুখ থেকে বের হল “ অ’রা (ওরা) আমার মা’রে লই যাইতাছে। ট্যাকা দিতে না পারলে অ’রা আমার মা’রে মাইরা ফালাইব।” এমন হৃদয় বিদারক কথাগুলো উচ্চারণ করে বুক ফাটানো কান্নায় যখন তজুমদ্দিন লঞ্চ টার্মিনাল ঘাট এবং লঞ্চের যাত্রীদের স্বম্বিত ফিরে আসে তথন আর কিছুাই করার ছিল না। লঞ্চ এমভি টিপু ততক্ষণে মনপুরার উদ্দেশ্যে গভীর মেঘনায় চলে গেছে।

খোজ নিয়ে যাত্রীরা জানতে পারে গত ২৮ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকা থেকে টিপু-৫ লঞ্চের যাত্রী হয় ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ভূইয়া কান্দি গ্রামের সিকদার বাড়ীর বিবি ফাতেমা (৫০)। সঙ্গে ছিল তার ১২ বছরের ছেলে আঃ রহমান এবং ৭ বছরের শিশু কন্যা রাহেলা। লঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৫ টায় তজুমদ্দিন ঘাটে এসে পৌছার পূর্বে লঞ্চের টিকেট মাস্টার ফাতেমার কাছ লঞ্চ ভাড়া মোট ৪শত টাকা দাবী করে। তার কাছে ছিল মাত্র ১শত টাকা। ওই টাকা নিতে  রাজী না হয়ে বরং তাদের সাথে অকথ্য আচরণ করেন। তারপর অনেক অনুনয় করলেও তার মন গলাতে পারেনি ফাতেমা। পরে লঞ্চ তজুমদ্দিন ঘাটে এসে পৌছলে আবার টাকা দাবী করে টিকেট মাস্টার। তা না হলে থেকে নামতে দিবে না বলে হুমকি দেয়। কিšতু ফাতেমা টাকা কোথাথেকে দিবে তার কাছে কোন টাকা নেই বললেও কোন কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে টিকেট চেকার’রা ফতেমার শিশু কন্যা রাহেলা(৭) কে নিষ্ঠুরের মত মায়ের কোল থেকে টেনে হিছড়ে নিয়ে তজুমুদ্দিন টার্মিনালের উপরে রেখে শিশুটির মা ফাতেমা এবং ভাই আঃ রহমানকে লঞ্চে আটকে রাখে। পরে তাদের দুইজনকে তাদের গšতব্য তজুমুদ্দিনে নামতে না দিয়ে লঞ্চে করে নিয়ে আসে মনপুরায়। এক পর্যায়ে লঞ্চ তজুমুদ্দিন ঘাট থেকে ছেড়ে দিলে শিশু কন্যা রাহেলা মা মা করে আতœচিৎকার করতে থাকে। পরে ঘটনার কারণ জানতে পারলে লঞ্চে উপস্থিত মনপুরা ও হাতিয়ার যাত্রীদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে। যাত্রীদের উত্তেজনা দেখে টিকেট মাস্টার ভয়ে আতœগোপন করে। এ সময় তজুমুদ্দিন ঘাটে শিশু কন্যার হৃদয়বিদারক কান্না আর লঞ্চের মধ্যে মা ফাতেমার বুকফাটা আর্তনাতে লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সামান্য কয়টা টাকার জন্য মা সšতানদের এহেন দূরগতি দেখে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পড়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুই একজন উদ্যেগ নিলে মুহুর্তের মধ্যে ৫/৬ শত টাকা উঠে যায়। একজন যাত্রী চিৎকার করে বলে ওরা অমানুষ। সবার কাছ খেকে পুরো টাকাই নিচ্ছে অথচ এই মহিলাটি বিপদে পড়ার কারনে টাকা দিতে পারছেনা তার কাছ থেকে টাকা না নিলে এমন কি ক্ষতি হবে? এ কথা বলে জেদের সাথে পকেট থেকে ৪শত টাকা বের করে দেন।

ওই লঞ্চে যাত্রী মনপুরা উপজেলা ৪ নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অলি উল্যাহ কাজল এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন এ ধরনের ঘটনা অমানবিক। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ স্টাফদের এহন আচরণের কঠিন বিচার হওয়া উচিত।

পরে লঞ্চ স্টাফরা যত্রিীদের চাপে ফাতেমা ও আবদুর রহমানকে মনপুরার ঘাটে নামিয়ে দেয়। লঞ্চ হাতিয়া থেকে আবার ঢাকা যাওয়ার পথে মনপুরা ঘাট থেকে তাদেরকে উঠিয়ে তজুমুদ্দিন ঘাটে নামিয়ে দিবেন বলে যাত্রীদের কাছে ওয়াদা করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উলেলখিত যাত্রী মনপুরা লঞ্চ ঘাটে পুনরায় লঞ্চ আসার অপেক্ষা করছে বিবি ফাতেমা।

ফাতেমা জানান, তিনি বলেন আমার বড় ভাই এবার হজ্জ্ব পালন করে বাংলাদেশে আসলে আমরা তার সাথে দেখা করার জন্য ঢাকা যাই। গত ২৮ নভেম্বর তজুমুদ্দিন আসার জন্য ঢাকা খেকে লঞ্চে উঠি কিšতু রাতে আমার ছেলের পকেটে থাকা টাকা গুলো হারিয়ে যায়। এজন্য লঞ্চের পুরো ভাড়া দিতে পারিনি। ছেলের অন্য পকেটে থাকা একশত টাকা দিলেও তারা নেয়নি। এজন্য আমাদেরকে অনেক অপমানিত হতে হলো। আমার দুধের শিশুকে তারা অমানুষের মত তজুমুদ্দিন রেখে আমাদেরকে মনপুরা নিয়ে এসেছে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সকাল থেকে কিছু খাইনি। জানিনা ওপারে আমার মেয়ের কি অবস্থা আছে বলে বার বার কেঁদে উঠেন তিনি। এব্যাপারে টিপু-৫ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপের জন্য লঞ্চের মোবাইলে নম্বরে বারবার ফোন করলে মুঠো ফোনটি বন্ধ ছিল।