উজিরপুরের জল্লায় অপহরণ নাটকের মূলনায়কের বিচারে দাবিতে বিক্ষোভ

কল্যাণ কুমার চন্দ, উজিরপুর ॥ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কুড়ুলিয়া গ্রামে ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছাত্রী নিখোঁজ হওয়াকে কেন্দ্র করে উজিরপুর থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে কুড়ুলিয়া গ্রামের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পরেছেন এবং ওই ছাত্রী অপহরণ নাটকের মূল নায়ক কুড়ুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষ শীলের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

সরেজমিনে উজিরপুর উপজেলার কুড়লিয়া গ্রামে গেলে জল্লা ইউপি চেয়ারম্যান উর্মিলা বাড়ৈ, ইউপি সদস্য শিপলু বাড়ৈ, রবীন্দ্র নাথ বৈদ্য, আশালতা কর, বাদী চিত্তরঞ্জনের খালাত ভাই শিক্ষক পরেশ বাড়ৈ, গৌরাঙ্গ বাড়ৈসহ এলাকার সহস্রাধিক লোকজন কুড়লিয়া বাজার মিলন সংঘের সামনে জমায়েত হয়ে কথিত ছাত্রী অপহরণ ও নারী নির্যাতন মামলায় কতিপয় নিরপরাধ লোকদের আসামী করায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা ঘটনার সাথে জড়িত মামলাবাজ প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র শীলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

গত ২ অক্টোবর কুড়ুলিয়া গ্রামের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী বনানী বিশ্বাসের পিতা চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বাদী হয়ে উজিরপুর থানায় দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার এজাহারসূত্রে জানা যায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের কন্যা বনানী পরীক্ষা দেয়ার জন্য কুড়ুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসার পথে নিখোঁজ হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে তার পিতা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজির পরে তাকে না পেয়ে প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র শীলের শরণাপন্ন হলে তিনি কৌশলে ওই ইউনিয়নের এক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাকে সাথে নিয়ে পূর্ব থেকে সুভাষ শীলের সাথে কুড়ুলিয়া গ্রামের কিছু অসহায় পরিবারের বিরোধ থাকার কারণে বনানী অপহরণের একটি নাটক সাজিয়ে উজিরপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার ৭/৩০ ধারা অপহরণ ও সহায়তার অপরাধে অসীম শীল, কৃষ্ণ রায়, রিপন হালদার ও নিখিল বৈরাগীকে আসামী করা হয়। এরমধ্যে অতি উৎসাহী ও প্রধান শিক্ষকের ক্যাডার বাহিনী হিসেবে পরিচিত কিছু সন্ত্রাসীরা অসীম শীলকে আটক করে বেধড়ক মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় নিরীহ অসীম শীল জেলহাজতে রয়েছে। এরপর ওই গ্রামের পুরুষদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিলে অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করে। মামলার ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বররা কিছুই জানেন না। এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মজিবর রহমানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, মামলাটির দায়িত্ব পাওয়ার পরে এলাকায় তদন্তে যাবার পূর্বেই একজন আসামী আটকের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে ছাত্রী নিখোঁজের সত্যতা পাই। দায়েরকৃত মামলার ১নং আসামী হওয়ায় আটক অসীমকে গ্রেফতার করে নিয়ে এসে জেলহাজতে পাঠাই। তবে মামলাটিতে কিছু জটিলতা ও নাটকীয়তা রয়েছে। যা পরবর্তী তদন্তে বেড়িয়ে আসবে বলে অনুমান করছি।

অন্যদিকে বাদী চিত্তরঞ্জনের এজাহারে বর্ণিত স্বাক্ষীদের মধ্যে কুড়ুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রমণী রঞ্জন সমদ্দার, পরিবার কল্যাণ সহকারী শিখা রাণী বিশ্বাস, কুড়ুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী নরেন মজুমদার সাংবাদিকদের লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ওই মামলায় তাদের স্বাক্ষী হিসেবে নাম অন্তর্ভূক্তি তাদের না জানিয়ে কিভাবে হল সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তারা এই নাটকীয় মিথ্যা মামলায় স্বাক্ষী দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। এতে জানা যায়, নিখোঁজ বনানী বিশ্বাস মামলাবাজ প্রধান শিক্ষক সুভাষ শীলের চক্রান্তে তারই এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে। সুভাষ শীলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বনানী অপহরণ নাটকের অবসান ঘটবে বলে উপস্থিত সবাই মন্তব্য করেছেন।

এব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ শীলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই ছাত্রীর পিতা আমার কাছে এসে পরামর্শ চাইলে আমি তাদের থানায় অভিযোগ করতে বলি। তবে কুড়ুলিয়া গ্রামের অধিবাসীরা নিখোঁজ বনানীর উদ্ধারের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবে বলে জানান। তারা আরও দাবি করেন, মিথ্যা মামলায় যেন কোন নিরীহ লোক আর হয়রানির শিকার না হয়। তারা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ শীলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।