বরিশালের চাঞ্চল্যকর সাগর হত্যা মামলা : দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ

উম্মে রুম্মান, বরিশাল ॥ কাগজ প্রতিবেদক,বরিশাল ॥ বরিশাল জিলা স্কুলের মেধাবী ছাত্র  রাশেদুল ইসলাম সাগর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। হত্যা মামলার সন্দেহ ভাজন আসামী নিহতের বাবা গোলাম রহমান, মা শিউলি বেগম ও গৃহকর্মী কাজল বেগম একে অপরের বিরুদ্ধে হত্যার দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। হত্যা রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডটিকে একটি দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। ২ দিনের রিমান্ড শেষে তিন আসামীকে গতকাল বুধবার গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির করা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) জিল্লুর রহমান বলেন, নিহত সাগরের বাবা গোলাম রহমান বাসার গৃহকর্মী কাজল বেগমের সাথে ১২ সেপ্টেম্বর রাতে অবৈধ মেলামেশা করতে গেলে সাগর তা দেখে ফেলে। সে চিৎকার করে মায়ের কক্ষের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পিছন থেকে বাবা গোলাম রহমান তাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে সাগর গ্যাসের উপর পড়ে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মারা যায়। উপ-পুলিশ কমিশনারের এ বক্তব্যের সাথে আসামীরা দ্বিমত পোষণ করে পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে। সাগরের মা শিউলি বেগম ও গৃহকর্মী কাজল বেগম পুলিশের সাথে সুর মিলিয়ে একই বক্তব্য দিলেও সাগরের পিতা স্কুল শিক্ষক গোলাম রহমান এ তথ্য অস্বীকার করে পুলিশের সামনেই সাংবাদিকদের বলেন, কাজলের সাথে তার কোনো অবৈধ সম্পর্ক ছিলো না। বরং তার স্ত্রী শিউলি বেগমের সাথে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর ম্যানেজার ফয়সালের সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ লেগেছিলো।

ঘটনার রাতে হঠাৎ বাসার ভিতর বিকট শব্দ শুনে গোলাম রহমান ঘুম থেকে উঠেন। স্ত্রী শিউলির শয়ন কক্ষের পাশেই পুত্র সাগরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। প্রতিবেশীরা এসে সাগরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার সাথে গোলাম রহমান হাসপাতালে যান। সেখানেই সাগরের মৃত্যু ঘোষণার পর গোলাম রহমান ও কাজল বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। শিউলি বেগম জানায় পুলিশ যা বলছে তাই সঠিক। তার ছেলে দৌড়ে আসার সময় পিছন থেকে গোলাম রহমান ধাক্কা দেয়ায় দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মারা গেছে। কাজল বেগম প্রায় একই রকম বক্তব্য দিলেও ঐ রাতে গোলাম রহমানের সাথে তার অবৈধ মেলামেশার তথ্য সত্য নয় বলে দাবী করেন। তবে গোলাম রহমানের সাথে দীর্ঘদিন যাবত তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে সে সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। লাশ উদ্ধারের পর কাউনিয়া থানা পুলিশ যে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেছিলো তাতে সাগরকে হত্যার আগেই তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছিলো বলে উলে¬খ করে বলা হয় নিহতের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন ছিলো। এ নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে কাজল ও শিউলি তাৎক্ষণিক ভাবে উত্তর দিতে গিয়ে বলে হয়তো সাগরের পিতার হাতে কোনো চাকু থাকতে পারে। কাজলের সাথে ঐ রাতে অবৈধ মেলামেশা না করলে কি কারণে গোলাম রহমান তার ছেলে সাগরকে ধাক্কা দিয়েছিলো তার কোনো জবাব দিতে পারেনি কাজল।

সাগরের পিতা গোলাম রহমান পুলিশের উপস্থিতিতেই নিজেকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, তার স্ত্রী শিউলি বেগমের পরকীয়া প্রেমের কারণেই সাগর খুন হয়েছে। শিউলি বেগম ও গৃহকর্মী কাজল বেগম সম্পর্কে পরস্পরের মামাতো-ফুপাতো বোন। তারা দু’জনে মিলে গোলাম রহমানকে ফাসাতে চাইছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। পুলিশ ও তিন আসামীর ত্রিমুখী বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আসল খুনীকে পুলিশ এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি’র ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম জানান, প্রয়োজনে তিন আসামীকে পুনরায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শিউলি বেগমের প্রেমিক ফয়সালকে সন্দেহভাজন হিসেবে দেখছে পুলিশ। সাংবাদিক সম্মেলন শেষে আসামীদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয় খুনের বর্ননা দিয়ে আসামীরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।