শিশুদের শান্তি নিকেতন

নিয়ে শান্তিনিকেতন গড়ার স্বপ্ন দেখছেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আব্দুল হাকিম। উপন্যাস ও নাটকে স্বর্ণপদক প্রাপ্ত এ ব্যক্তিটি শিশু শিক্ষার দূরাবস্থা দেখে ২০০৫ সালে এস.এন কিন্ডারগার্টেন নামক শিশুস্বর্গের যাত্রা শুরু করেন। চারদিকে গাছপালার ছাঁয়ায় ঢাকা। এরমধ্যে শিশুদের কোলাহল একটা আনন্দমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই আনন্দঘন পরিবেশ বজায় রাখতে পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে শিশুদের জন্য মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুবান্ধব একটি লাইব্রেরী গড়ারও স্বপ্ন দেখছেন তিনি। যে লাইব্রেরীতে থাকবে বিভিন্ন মনিষীর ছবিসহ তাদের জানার পদ্ধতি। এখানে আসবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের দর্শনার্থীরা। দেখবেন পাঠদানের অপরূপ কৌশল। এ কামনা নিয়েই আব্দুল হাকিমের সামনের পানে এগিয়ে চলা।

শিশুদের শান্তিনিকেতন (ইনসেটে অধ্যাপক আব্দুল হাকিম)-ছবি: হীরা
শিশুদের শান্তিনিকেতন (ইনসেটে অধ্যাপক আব্দুল হাকিম)-ছবি: হীরা

এখন থেকে ঠিক বিশ বছর আগে আব্দুল হাকিম যখন অধ্যাপনা করাতেন তখন থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন শিক্ষার কঠিনতম স্তর হলো শিশু শিক্ষা। অপরদিকে দেশের উন্নতি নির্ভর করে শিশুদের গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। যার ফলে অধ্যাপনা থেকে অবসরে এসে প্রাপ্ত ছয় লাখ টাকা দিয়ে নিজ বাড়ির ৫০ শতক জমির ওপর নির্মান করেন তার স্বপ্নের শান্তিনিকেতনের। নামাঙ্কিত করেন তার প্রিয় সহধর্মিনী শামসুন্নাহারের নাম অনুসারে এস.এন কিন্ডারগার্টেন নামে। কারন হিসেবে জানান, তার সংসার বিরাগী অবস্থার মধ্যদিয়ে দক্ষতার সাথে সংসার আগলে রাখার পাশাপাশি এই বিদ্যালয় তৈরীতে বেশ অবদান রাখেন তার স্ত্রী। বেশ উৎসাহও যুগিয়েছেন তিনি। তার (আব্দুল হাকিমের) বন্ধুদের অনেকেই বলেছিলেন, এ দূর গ্রামে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান সফল হবার নয়। তখন জবাব ছিল অধ্যাপক হাকিমেরÑসফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করবে আমার কর্মপ্রচেষ্টার ওপর। যার জন্য বলতে গেলে চব্বিশ ঘন্টাই তিনি এ কিন্ডারগান্টেনে ব্যয় করেন। শুরুতে ৫৫ জন বিদ্যার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে আটটি শ্রেণীতে এখন শিক্ষার্থী রয়েছে দু’শর কাছাকাছি। এ ছাড়াও এ স্কুলে রয়েছে শিক্ষকসহ ১৩ জন স্টাফ এবং ৩ জন ভ্যানচালক।

আব্দুল হাকিম স্বপ্ন দেখেন, শিশুদের জন্য একটি মিনি চিড়িয়াখানার। যেখানে থাকবে বানর, বিলাতি ইঁদুর, বিভিন্ন প্রজাতের পাখি ও অনান্য প্রাণী। যা দেখে আনন্দের সাথে পাঠ নেবে শিশুরা। এছাড়াও তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে একটি শিশু বান্ধব লাইব্রেরী। যেখানে থাকবে বিভিন্ন মনিষীর ছবি। সেমতে তাদের জানার বিষয়। শুরুতেই পরিকল্পনার এসব ব্যবস্তা করতে পারেননি বলে নিজেকে অপরাধী মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা অনুদান দিতে চাইলেও তিনি গ্রহণ করছেন না। কারন তাতে তার স্বপ্ন ব্যহৃত হবে বলে। তবে আর বছর খানেকের মধ্যেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ পর্যায়ক্রমে তিনি শুরু করবেন। সে লক্ষেই তিনি ধার্য্য করে রেখেছেন নিজ বাড়িতে আরো দেড় একর সম্পত্তি।

শিশুবান্ধব এই বিদ্যালয়টিতে প্রতিবছর ফেব্র“য়ারী মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে হাতেখড়ি দেয়ার মধ্যদিয়ে পাঠদানের যাত্রা শুরু হয়। তখন নতুন বই দেয়ার পাশাপাশি খাতা, কলম, খড়িমাটির প্যাকেট তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। শিশুদের বর্ণমালা থেকে শুরু করেন বলে এখানের নার্সারী বিভাগ পে¬ এবং ক, খ গ্র“পে বিভক্ত করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত আটটি শ্রেণী রয়েছে। শিশুদের লেখাপড়ার ভিত গড়তেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ইংরেজী ভাষার সহজ আলাপনের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এরসাথে ছবি আঁকা, নৃত্য ও গান শেখার জন্য যথাক্রমে সপ্তাহের মঙ্গল ও শুক্রবারে ক্লাশ নেয়া হয়। পড়ালেখার বেলায় নিয়মিত পাঠটিকা তৈরী করা, সুন্দর হাতের লেখা ও দিনপঞ্জি লেখার বিষয়ে বিশেষ ভাবে তাগিদ দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ভ্যানযোগে শিশুদের আনা নেয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদ পার্বণে গরীব বিদ্যার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় চিনি, সেমাইয়ের। অতিদরিদ্র এলাকা বলে এখানে বিনা বেতনে অধ্যায়ন করার সুযোগও রয়েছে। সেক্ষেত্রে অধ্যাপক আব্দুল হাকিম বলেন, যেমন একজন প্রতিবন্ধী অভিভাবক যার উদগ্র বাসনা তার সন্তানকে এখানে পড়াবেন বলে। সেক্ষেত্রে না বলার সুযোগ কই। এমনি করে ২৫% অভিভাবক নিয়মিত বেতন দিতে না পারায় এখনো সাবসিডি দিতে হয় তাকে।

চিড়িয়াখানা ও লাইব্রেরী নির্মান শেষে তিনি নির্মাণ করবেন রেষ্ট হাউস। যেখানে অবস্থানের সুযোগ পাবেন একদা দুর-দূরন্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। যারা আসবেন শিশুবান্ধব পাঠদান অনুসরন ও মিনি শান্তিনিকেতন পরিদর্শনে।

: গৌরনদী থেকে- খোকন আহম্মেদ হীরা