করাই বিলের নজর কারা শাপলা

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। বাংলাদেশের শহর, বন্দর, গ্রামে এ সময় শাপলা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সাধারণত শাপলা লাল ও সাদা রঙ্গের হয়ে থাকে। এরমধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধী কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুন খুব বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি।


বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত বাগধা ইউনিয়নের আমবৌলা এলাকার কড়াই বিলে ফুটেছে নজরকারা শাপলা। আর এ নজরকারা শাপলা দেখার জন্য প্রতিনিয়ত আগৈলঝাড়াসহ পাশ্ববর্তী গৌরনদী, উজিরপুর, কোটালীপাড়া উপজেলার উৎসুক ভ্রমন পিপাসুরা ভীর করছেন করাই বিল এলাকায়। প্রথম দেখায় মনে হয় পুরো বিলাঞ্চলটি যেন লাল ও সাদা রঙ্গে ছেয়ে গেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আপাং সরদার, সাইফুল ইসলাম, প্রবীর বিশ্বাসসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার আমবৌলা ও কোটালীপাড়া উপজেলার সুয়াগ্রামের প্রায় চার কিলোমিটারের বর্গাকার করাই বিল। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, প্রায় দু’শ বছর পূর্ব থেকে করাই বিলের প্রতিটি জমিতে শাপলা জন্মেছে। তবে এরমধ্যে অধিকাংশ শাপলাই হচ্ছে লাল রঙ্গের (ঔষধী শাপলা)। আমবৌলা গ্রামের সমাজ সেবক আব্দুল আজিজ সরদার জানান, করাই বিলের শাপলা উত্তোলনের পর স্থানীয় হাট-বাজারসহ পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে বিক্রি করে জিবিকা নির্বাহ করছেন তাদের গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার। তিনি আরো জানান, করাই বিলের নজরকারা শাপলা দেখার জন্য প্রতিদিন পাশ্ববর্তী উপজেলার ভ্রমন পিপাসুরা তাদের গ্রামে আসা যাওয়া করছেন।   

গৌরনদীর ভেষজ গবেষক মোঃ আহসান উল্লাহ বলেন, শাপলা চুলকানী ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। প্রতি ১’শ গ্রাম শাপলার লতায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলো, ক্যালোরি-প্রটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। আবার শাপলার ফল দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ ভাজা যায়। যেটি গ্রামগঞ্জে ঢ্যাপের খৈ বলে পরিচিত। তিনি আরো জানান, মাটির নিচের মূল অংশকে (রাউজোম) আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিল-ঝিল-হাওড়-বাঁওড়-পুকুরের পানি যখন কমে যায় তখন এই শালুক তুলে খাওয়া যায়। খেতেও বেশ সুস্বাদু। তবে আমাশয়ের জন্য এটি খুবই উপকারী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।