অন্ধ ও দুস্থদের কল্যানে সবকিছু বিলিয়ে দিতে চান কবিরাজ হোসেন মোল্লা

বিলিয়ে দিতে চান। কবিরাজ হোসেন মোল্লা গাছ গাছড়া জড়ি বটি দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে প্রচুর সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি সারাদেশে পৌছে দিতে চান তার নিজেন তৈরি দাঁতের মাজন, কোবরা বাম, হাতকাটা মহা শঙ্কর তৈল ও অন্যান্য কবিরাজী ঔষধ। নিজের ছেলে মেয়েদেরকে ও তিনি সমাজ সেবার কাজে নিয়োজিত করে নিজে আত্মতৃপ্তী লাভ করেছেন। কাসেমাবাদ গ্রামের অন্ধ লোকমান (৪৫), মাদারীপুরের অন্ধ মতিয়ার (৫০), আগৈলঝাড়ার জঙ্গলপট্টি গ্রামের অন্ধ আউয়াল (৩৫), শিকারপুরের আলমগীর (৪৫), ইসমাইল (৫০)সহ ৫০/৬০ জন প্রতিবন্ধি বাস ও লঞ্চে ফেরী করে হোসেন মোল্লার কবিরাজী ঔষধ বিক্রি করে। এ ছাড়া কারখানায় পন্য সামগ্রী উৎপাদন করে আরও ১০/১২ জন নারী পুরুষ। অন্ধ প্রতিবন্ধি এতিম ও বিধবাদের কাছ থেকে কোন লাভের টাকা নেননা কবিরাজ হোসেন মোল্লা। এদের কাছ থেকে আসল টাকাটা পেলেই তিনি তুষ্টি লাভ করেন। উজিরপুরের শিকারপুর বাজারে তার কারখানায় তৈরী হচ্ছে বিভিন্ন গাছ গাছড়া দিয়ে কবিরাজী ঔষধ।

এছাড়াও সেখানে তৈরি হচ্ছে আগরবাতি, মোমবাতি, গোলাপজলসহ ১০/১৫টি পন্য সামগ্রী। তার বড় পুত্র ডাঃ মোল্লা মনিরুজ্জামান লিটন এম.বি.বি.এস পাশ করে বাবার নির্দেশে বিনে পয়সায় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। তিনি শিকারপুরে বসেন। বাবার কাজে সহায়তা করছেন অপর পুত্র আসাদুজ্জামান রিপন। মেঝ মেয়ে রুবিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রী নিয়ে শিক্ষাকতা করছেন লালমাটিয়া কলেজে। কবিরাজ হোসেন মোল্লা জানান, আমার এ কাজে পরিবারের সবাই খুশি। ছোট মেয়ে রুমা বরিশাল বজ্রমোহন বিশ্ববিদ্যালয় (বিএম) কলেজে উদ্ভিদ বিদ্যায় অর্নাস পড়ছে। সেও আমার পেশায় আসতে আগ্রহী। ৮২ বছর বয়সের কবিরাজ হোসেন মোল্লা এখনও সুঠম দেহের অধিকারী। তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর সিলেটের সরকারি তিব্বিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল আবু তৈয়ব আলী সাহেবের কাছে কবিরাজী শিখি। তখন ওই এলাকায় ফেরী করে কবিরাজী ঔষধ বিক্রি করতাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এলাকায় ফিরে এসে কবিরাজী শুরু করি। ঔষধ সেবন করে রোগীরা আরোগ্য লাভ করতে থাকে। ফলে অল্পদিনেই আমার তৈরি ঔষধের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ঔষধ বিক্রির জন্য অন্ধ-দুস্থদের বেঁছে নেই। ওরা আজ ঔষধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছে, এজন্য নিজেকে স্বার্থক মনে করি।

এই মহা মানব তার মৃত্যুর পর মরদেহটি বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে দান করে গেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেমিক হোসেন মোল্লার বড় সাধ বঙ্গবন্ধুর নামে নিজ বাড়ির সামনে একটি আয়ুর্বেদীয় মহা বিদ্যালয় স্থাপন করার। এজন্য তিনি ২ একর জমি ক্রয় করে ২০০০ সালের দিকে ‘বঙ্গবন্ধু আয়ূর্বেদিক কলেজ’ নামকরন করেছিলেন। বিগত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী বিএনপির ক্যাডাররা ওই কলেজের নেইম প্লেট ভেঙ্গে দেয়। তারা কবিরাজ হোসেন মোল্লাকে হত্যার জন্যও বিভিন্ন রকম হুমকিও প্রদান করেছিল। সেই থেকেই ঝিমিয়ে পড়েছে কবিরাজ হোসেন মোল্লার স্বপ্ন সাধ। বর্তমানে কোন বিত্তবান ব্যক্তির সহয়তা পেলে তিনি ভবন নির্মান কাজ শুরু করবেন বলে জানান। তিনি অন্ধদের কল্যানের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে সারা দেশব্যাপী একটি প্রকল্প চালু করতে চান। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় এক একটি ভ্যানের মাধ্যমে তার উৎপাদিত পন্য ভোক্তাদের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিতে চান তিনি। তার পন্য সামগ্রী বিক্রি করবে অন্ধ ও দুস্থ ব্যক্তিরা। যাবতীয় লভাংশ তারাই ভোগ করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। কবিরাজ মোল্লার ভাষ্যমতে, ভেজাল ও নিন্মমানের ঔষধে বাজার ছেয়ে গেছে। একারনে মানুষকে সুস্থ সবল রাখতে হলে আয়ূর্বেদিয় চিকিৎসার কোন বিকল্প নেই।